— নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্র এবং রাজ্য রাজনীতির উঠানে হঠাৎ করেই এসে পড়েছে একখানা শব্দ— ‘ঠুমকা’। বুধবার দিল্লিতে দাঁড়িয়ে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গেই এক সাক্ষাৎকারে ‘ঠুমকা’ শব্দটি দু’বার ব্যবহার করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে শরীর দুলিয়ে খানিক অঙ্গভঙ্গিও করেছিলেন। গিরিরাজের সেই ‘ঠুমকা’র প্রতিধ্বনি দিল্লি থেকে বাংলা হয়ে এ বার তাঁর দিকেই ফিরে এসেছে ব্যুমেরাং হয়ে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষের অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার সকালে সংসদ চত্বরে ধর্নায় বসল বাংলার শাসকদল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সংসদ চত্বরে বাংলার তৃণমূলের মহিলা সাংসদদের দেখা গিয়েছে প্ল্যাকার্ড হাতে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দাঁড়িয়ে গিরিরাজের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য গিরিরাজকে সংসদ থেকে অবিলম্বে বহিষ্কার করার দাবিও তুলেছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার সকালেই প্ল্যাকার্ড হাতে সংসদ চত্বরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে হাজির হন তৃণমূলের মহিলা সাংসদেরা। গিরিরাজের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ধর্নায় অংশ নেন শতাব্দী রায়, মহুয়া মৈত্র, মৌসম বেনজির নূর, মালা রায়, অপরূপা পোদ্দার এবং প্রতিমা মণ্ডল। একই সময়ে তৃণমূল তাঁদের এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে জানায় এই ধর্না অবস্থানের কথা। বাংলার মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যকে নারীবিদ্বেষী বলে তৃণমূল লেখে, ‘‘আমাদের নারীই আমাদের শক্তি। আর বাংলা তাদের নারীশক্তিকে বরাবর উদ্যাপন করে এসেছে। বাংলা মনে করে, প্রত্যেক নারীই এক এক জন দুর্গা। তাই আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের নিম্নরুচির মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আমাদের মহিলা সাংসদেরা।’’
তবে একই সঙ্গে তৃণমূল এ-ও লিখেছে, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের কাছ থেকে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য এই প্রথম শোনা গেল তা নয়। তাঁদের প্রায়শই এ ধরনের নারী-বিরোধী মন্তব্য করতে শোনা যায়। তার কারণ হিসাবে তৃণমূল লিখেছে, ‘‘আসলে বিজেপি হল এমন একটি দল, যার নেতাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। যে দলের নেতা, দেশের মহিলা খেলোয়ারদের যৌন হেনস্থা করেন, সেই দলের মন্ত্রী শেখাচ্ছেন এক জন মহিলার কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার সকালে সংসদের অধিবেশনের ফাঁকেই গিরিরাজ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য দুনিয়ায় রয়েছেন। বাংলায় যখন গরিবের অধিকার কেড়ে নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে, তখন উনি ঠুমকা লাগাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। উচিত নয়।’’ প্রসঙ্গত, ‘ঠুমকা’ নৃত্যশৈলীর একটি মুদ্রা। তবে তা সাধারণত খুব ‘প্রশংসাসূচক’ অর্থে প্রয়োগ করা হয় না। সেই সূত্রেই গিরিরাজের মন্তব্য শুনে অনেকের মনে হয়েছে, মমতাকে তির্যক আক্রমণ করতেই এ হেন শব্দ ব্যবহার করেছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার এই সদস্য। শুধু তা-ই নয়, ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মমতাকে আক্রমণ করতে গিয়ে নিজের শরীরও দোলাচ্ছেন গিরিরাজ।
এর পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূলের মহিলা মন্ত্রী এবং সাংসদেরা। বুধবারই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে দলের সাংসদ মহুয়া বলেন, ‘‘এটা বিজেপির নারীবিদ্বেষী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তিন-তিন বার তিনি মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। কারও দয়ায় নয়। তাই গিরিরাজ সিংহকে জ্ঞান দিতে হবে না কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত।’’