Derek O'Brien

‘শব্দ’ কোরো না, ‘কণ্ঠরোধ’ রুখতে সরব ডেরেকরা

তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, শব্দ তালিকার এমন প্রবল বাড়বৃদ্ধি মোদী জমানায় হয়েছে বিরোধীদের চাপে রাখার জন্যই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৫
Share:

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। —ফাইল চিত্র।

সংসদীয় আইনকে কাজে লাগিয়ে শাসক দল রেকর্ড থেকে অস্বস্তিকর বক্তব্য মুছে ফেলতে চাইছে বলে সরব হলেন বিরোধীরা। ইন্ডিয়া জোটকে সঙ্গে নিয়ে আজ এই অভিযোগ তুলল তৃণমূল। পাশাপাশি, মোদী জমানায় অজস্র ‘নিরপরাধ’ শব্দকে ‘অসংসদীয়’ শব্দের তালিকার আওতায় আনা হয়েছে বলেও অভিযোগ। সরকার প্রতিপক্ষকে বোবা করতে রাখতে চায় বলে দাবি করে সুর চড়িয়েছেন বিরোধীরা।

Advertisement

তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, ‘‘গত কয়েক বছরে সংসদীয় আইনকে কাজে লাগিয়ে সেই সব বক্তব্যকেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে শাসক দল, যাতে তাদের সমস্যা রয়েছে। বা যা থেকে তাদের প্রকৃত ভূমিকা সর্বসমক্ষে চলে আসে।’’ কিছুটা লঘু সুরে তিনি যোগ করেন, ‘‘এই প্রবণতা দেখে আমার আশা ভোঁসলের গাওয়া ষাটের দশকের গানটি মনে পড়ে যাচ্ছে— পর্দে মে রহনে দো, পর্দা না উঠাও!’’

১৯৫২ সালে যখন প্রথম অসংসদীয় শব্দের তালিকা প্রকাশিত হয়, তাতে ১৬৩টির মতো শব্দ ছিল। গত বছর লোকসভার সচিবালয় যখন এই সংক্রান্ত নতুন সংস্করণ প্রকাশ করে, দেখা যায় তা প্রায় ৫০ পাতায় পৌঁছে গিয়েছে! ললিপপ, নাটক, দুর্নীতি, ভন্ডামির মতো শব্দও তালিকায় ঢুকে পড়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, শব্দ তালিকার এমন প্রবল বাড়বৃদ্ধি মোদী জমানায় হয়েছে বিরোধীদের চাপে রাখার জন্যই।

Advertisement

দু’দিন আগেই তৃণমূল এবং আপ-এর দুই সাংসদ, যথাক্রমে ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং রাঘব চাড্ডার বিরুদ্ধে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন একাধিক বিজেপি সাংসদ। চলতি বাদল অধিবেশনের গোড়া থেকেই দেখা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে বারবার বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ছেন ডেরেক। বিরোধীদের মধ্যে তিনি স্বর তুলছেন সবচেয়ে বেশি। ‘নাটকবাজি’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে ধনখড় তাঁকে সতর্কও করেছেন। আজ ডেরেক সরব হয়েছেন ওই নোটিস নিয়েই। তাঁর কথায়, ‘‘জুলাই মাসের কুড়ি তারিখ আমি রাজ্যসভায় বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে মুখ খুলতে হবে। এর বেশি বা কম কিছুই বলিনি। কিন্তু এই বক্তব্য বাদ দিয়ে দেওয়া হল। এর মধ্যে কোন শব্দ অসংসদীয়, আমাকে বোঝান। প্রতি দশটি বাক্য মুছে দেওয়া হলে দেখা যাচ্ছে, তার ন’টি বিরোধী সাংসদদের।’’

বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যেও আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, যেহেতু বিভিন্ন বিরোধী দলই এর ভুক্তভোগী, তাই বিরোধী ঐক্যকে এক সূত্রে বাঁধার ক্ষেত্রে এটি একটি অস্ত্রও বটে। ডেরেক যেমন আজ এক লপ্তে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী, জয়রাম রমেশ থেকে সিপিএমের জন ব্রিটাস, সিপিআই-এর বিনয় বিশ্বমের নাম উচ্চারণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এঁদের প্রত্যেকের বক্তৃতার অংশবিশেষ ছাঁটাই হয়েছে সাম্প্রতিক অতীতে।

বিরোধী শিবিরের মতে, বিদেশমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফর সংক্রান্ত মতামত, স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএস-এর অবস্থান নিয়ে মন্তব্য, দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ, কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শের মতো বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধী সাংসদদের মন্তব্য কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাক্তন সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি এর আগে বলেছিলেন, তাঁর বক্তৃতা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দেওয়া হয়, নিছক এই কারণে যে তিনি শাসক দলের সমালোচনা করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement