শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে হবে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট’’ — ফাইল ছবি।
আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা মনে করেন, রাহুল গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব করার উপযুক্ত। ২০২৪ লোকসভা ভোট-পরবর্তী অধ্যায়ে বিরোধীপক্ষের প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় কংগ্রেসের সাংসদকে রেখেছেন শত্রুঘ্ন। ‘বিহারিবাবু’র তালিকায় রয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। আর তাঁর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? শত্রুঘ্নের মতে, তিনি আগামী লোকসভা ভোটে ‘গেমচেঞ্জার’।
তবে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রিত্ব করার জন্য ‘কাবিল’ (উপযুক্ত) বলে মনে করেন শত্রুঘ্ন। পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, রাহুল ‘কাবিল’ ঠিকই। কিন্তু তাঁর দলের (কংগ্রেস) বিরোধী জোটকে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখনও ফয়সালা হয়নি। এর পরেই আসানসোলের সাংসদের সংযোজন, মমতা একজন ‘পরীক্ষিত’ রাজনীতিবিদ। আগামী লোকসভা ভোটে মমতা ‘গেমচেঞ্জার’ হয়ে উঠবেন বলেই তাঁর আশা।
বুধবার রাতে পটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় শত্রুঘ্ন তাঁর দলনেত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। পাশাপাশিই জানিয়ে দেন, বিরোধীদের তরফে প্রধানমন্ত্রীর ‘মুখ’ কে হবেন, তা নিয়ে এখনও ধন্দ থাকলেও নরেন্দ্র মোদীকে যে আর প্রধানমন্ত্রী পদে ফেরানো যাবে না, সেটি নিশ্চিত।
ঘটনাচক্রে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতাকে কটাক্ষ করতে গিয়ে শত্রুঘ্ন টেনে এনেছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ রাহুলের নাম। রাহুলকে ‘ইয়ুথ আইকন’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। তখনই তৃণমূলের অন্দরে বিস্ময় তৈরি হয়েছিল। কারণ, গোয়ার বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক তলানিতে। আমন্ত্রণ পেয়েও তৃণমূলের কোনও নেতা রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রায় শামিল হননি। যদিও প্রকাশ্যে শত্রুঘ্নের রাহুল-মন্তব্য নিয়ে কেউ কিছু বলেননি। তার পরে অবশ্য শত্রুঘ্নকেও আর রাহুলের প্রশংসা করতে শোনা যায়নি। তৃণমূলের তরফে সামগ্রিক ভাবে পরোক্ষে হলেও বিজেপিকে হটানোর প্রশ্নে কংগ্রেস তথা রাহুল-বিরোধী বক্তব্যেই বারবার শোনা গিয়েছে। যেমন শোনা গিয়েছে বুধবারেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারসভায়।
বুধবার মেঘালয়ে ভোটের প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে মেঘালয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন রাহুলও। দুই পৃথক মঞ্চ থেকে একে অপরকে কটাক্ষই করেছেন মমতা এবং রাহুল। মমতা বলেন, ‘‘কংগ্রেস ভোট চাইছে! তাদের কোনও নৈতিক অধিকার আছে?’’ তৃণমূলকেই ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান মমতা। তার জবাবে কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে রাহুল বলেন, ‘‘আপনারা তৃণমূলের ইতিহাস জানেন। পশ্চিমবঙ্গে হিংসার কথা জানেন। ওরা গোয়ায় গিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল বিজেপিকে সাহায্য করা। মেঘালয়েও তা-ই।’’ মেঘালয়ে ভোটের প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসের মতাদর্শ নিয়ে বক্রোক্তি শোনা গিয়েছিল অভিষেকের ভাষণেও। বস্তুত, রাহুল ভোটের প্রচারে তৃণমূল সম্পর্কে ওই মন্তব্য করার পর তাঁকে কড়া আক্রমণ করে টুইট করেন অভিষেক।
ঘটনাচক্রে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই ‘ডায়নামিক’ রাহুলকেই ‘ইয়ুথ আইকন’-এর তকমা দিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন। রাহুলের কাছ থেকে মোদীর কী কী শেখার আছে, টুইট করে জানিয়েছিলেন তা-ও। তার পরের ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে গিয়েছে, তার ফলেই কি তিনি মমতাকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসাবে তুলে বর্ণনা করেছেন?
শুধু মমতার স্তুতি করাই নয়, শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, আমার বন্ধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘অচ্ছে দিন’ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের শপথ নিতে হবে, যাতে মোদী আবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে ফিরতে না পারেন। সে জন্য যা করার করতে হবে।’’ তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে আমরা এই প্রশ্নটাই শুনে আসছি যে, নেতা কে হবেন। কিন্তু বিরোধীদের এখানে আটকে পড়লে চলবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কার প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে হবে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট।’’
বিহারের পটনা সাহিব কেন্দ্র থেকে ২০১৯ সালে কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়েছিলেন শত্রুঘ্ন। কিন্তু হেরে যান। তার আগে দু’বার ওই কেন্দ্র থেকেই জিতেছিলেন তিনি। তার পর শত্রুঘ্ন যোগ দেন তৃণমূলে। বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। বাবুল আসানসোলের সাংসদ পদও ছেড়ে দেন। আসানসোলের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করে শত্রুঘ্নকে। বিপুল ব্যবধানে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে আবার লোকসভায় পৌঁছে যান ‘বিহারিবাবু’।