কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে ফাইল ছবি
রবিবার সকালে কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের ডাকা উপরাষ্ট্রপতি পদে যৌথ বিরোধী প্রার্থী বাছাই সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
বিষয়টি এ রকম নয় যে, বিরোধীদের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক অতীতের সংসদীয় অধিবেশনগুলির মতোই এ বারও কংগ্রেসের প্রশ্নে সেই ‘অ্যালার্জি’ ফিরে এসেছে তৃণমূলে। দিল্লির রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এই বৈঠকটি যে-হেতু কংগ্রেস ডেকেছে, সেই জন্যই বিশেষ করে অনুপস্থিত থাকছে তৃণমূল। জানা গিয়েছে, বৈঠকে যোগ দেবে না তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-ও। ঘটনা হল, কংগ্রেস বা তৃণমূল কেউই কিন্তু তাদের নিজস্ব কোনও প্রার্থী উপরাষ্ট্রপতি পদে দেয়নি। ফলে যে নামটি বিবেচিত হবে, তাতে এমনিতেই ঐকমত্য থাকবে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই দু’টি নাম ভেবে রাখা হয়েছে বলে খবর। কিন্তু সংসদের শুরুতেই কংগ্রেসের আহ্বানে ‘না’ জানিয়ে গোটা বাদল অধিবেশনেই কি অসহযোগিতার বার্তা দিয়ে রাখল তৃণমূল? এই প্রশ্নও উঠছে।
এই বিষয়ে কংগ্রেসের লোকসভার লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তরিক নয়। সেই জন্যই ওরা বৈঠকে আসে না।’’
প্রকাশ্যে অবশ্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২১শে জুলাই কলকাতায় শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির কারণে কোনও সাসংদই দিল্লি পৌঁছতে পারবেন না। ফলে শুধু কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকই নয়, তৃণমূল অনুপস্থিত থাকছে আজ স্পিকারের ডাকা বৈঠকে এবং আগামিকাল বেঙ্কাইয়া নায়ডুর ডাকা রাজ্যসভার নেতাদের বৈঠকেও। প্রথমে স্থির হয়েছিল সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকেও তৃণমূল অনুপস্থিত থাকবে। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। স্থির হয়, তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বৈঠকে যোগ দেবেন। এই সিদ্ধান্ত বদলের কারণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তৃণমূল সূত্র জানিয়েছে, ‘‘আমাদের কাছে অনেক দলের কাছ থেকেই অনুরোধ আসছিল। তাই এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ দিল্লির রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়ে আজ দু’বার সুদীপকে ফোন করেন। সুদীপ গোটা বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান। তার পরেই ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ রাতেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন সুদীপ।
তবে ওই বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও আজ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়েনি তৃণমূল। বাংলার শাসক দলের অভিযোগ, সংসদে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। আজ এই সর্বদলীয় বৈঠকের (সরকার এবং বিরোধী পক্ষ) প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে বলেছেন, ‘‘সংসদে কখনও কোনও জনকেন্দ্রিক বিষয়ে কেন্দ্র আলোচনার অনুমোদন দেয় না। সংসদীয় গণতন্ত্রকে উপহাস করে ওরা ভয়ে পালায়।’’ এখানেই শেষ নয়। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ লেখেন, ‘‘প্রথমে সরকার পক্ষ বলে, ‘আমরা যে কোনও বিষয়ে আলোচনায় ইচ্ছুক।’ শেষ পর্যন্ত তারা বিরোধীদের উপেক্ষাই করে।’’
অন্য দিকে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত দু’বছর অতিমারির কারণে আমরা শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান করতে পারিনি। এই বিশেষ দিনটির সঙ্গে আমাদের দলীয় আবেগ জড়িয়ে আছে। ২১ তারিখ পর্যন্ত আমরা সকলে ময়দানে থাকব এবং অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই বিষয়টি দিল্লিতে যেখানে যেখানে জানানো প্রয়োজন, জানিয়ে দিয়েছি।’’
রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠছে, উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠকে তৃণমূল কেন থাকবে না? যেমনটা নাকি হয়েছিল বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে। সেই সময়ে মমতা সবাইকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেওয়ায় কংগ্রেস এবং বামেরা ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরা সকলেই প্রতিনিধি পাঠান। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মমতার ডাকা ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন জয়রাম রমেশ, রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। কংগ্রেস শিবিরের তাই পাল্টা প্রশ্ন, তাদের ডাকা বৈঠকে কেন তৃণমূল থাকবে না?
প্রবাদ আছে, সকাল দেখেই বোঝা যায়, দিন কেমন যাবে। কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের এই ‘অ্যালার্জি’ যদি বজায় থাকে, তা হলে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্য বাদল অধিবেশনে কতটা দেখা যাবে, তাই নিয়ে সন্দেহ দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ে তা-ও ১৭টি দল একসঙ্গে বসে বিরোধী ঐক্য তৈরির বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি ভোটের সময়ে সেই চিত্র ছত্রভঙ্গ দেখাচ্ছে বলেই মনে করছে দিল্লির রাজনৈতিক শিবির।