—ফাইল চিত্র।
বুধবার দিল্লিতে বসছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া-র ‘সমন্বয় এবং নির্বাচনী কৌশল বিষয়ক কমিটি’-র প্রথম বৈঠক। প্রথম বৈঠকেই যে আসন সমঝোতার প্রশ্নে নির্দিষ্ট দিশামুখ পাওয়া যাবে, এমন কেউই মনে করছেন না। কিন্তু পটনা থেকে বেঙ্গালুরু হয়ে মুম্বইয়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, তা এ বার ভোটের ময়দানে কতটা অটুট থাকে সেই পরীক্ষা শুরু হবে বুধবার।
ইন্ডিয়া-কে ঘিরে যে উদ্দীপনা পটনা, বিশেষ করে মুম্বইয়ের বৈঠকে দেখা গিয়েছিল, তা এখন কিছুটা থমকে রয়েছে বলেই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। একটি অভিযোগ প্রকাশ্যে না-করলেও ঘরোয়া ভাবে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল— আসন সমঝোতার প্রশ্নে ‘ধীরে চলো’ কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেস এবং তাতে বামেদের ইন্ধন রয়েছে। তৃণমূলের বক্তব্য, আসন্ন ৫ রাজ্যে নির্বাচনে ভাল ফল করবেন বলে আশা করছেন রাহুল গান্ধীরা। সেই স্কোরবোর্ড হাতে নিয়ে দর কষাকষি করলে তাঁরা সুবিধাজনক জায়গায় থাকবেন বলেই এই ‘ধীরে চলো’।
বুধবারের বৈঠকে তৃণমূল সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে পারছেন না ইডি-র তলবে। তবে তাঁর দল যে প্রথম বৈঠকেই বড় কিছু আশা করছে, এমন নয়। বাংলা, পঞ্জাব এবং দিল্লিতে বিজেপি-বিরোধী জোটের আসন সমঝোতা মসৃণ এবং দ্রুত না-হলে, গোটা প্রয়াস জলে যাবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি সমাজমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম, প্রচার বিষয়ক যে কমিটিগুলি তৈরি হয়েছে, তাতে বড় দলগুলি তাদের সদস্য নির্বাচিত করলেও এখনও কোনও প্রতিনিধিপাঠায়নি তৃণমূল। এ ব্যাপারে তারা কিছুটা গয়ংগচ্ছ ভাবই দেখাচ্ছে। বার্তা স্পষ্ট, কংগ্রেস দ্রুত আসন রফা নিয়ে পদক্ষেপ করলে তবেই গা ঝাড়া দিয়ে বসবে তৃণমূল।
তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, এক এক রাজ্যের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ও বাস্তবতা ভিন্ন। ফলে জোটের রফা হবে সেই রাজ্যের সমীকরণ মেনে। দিল্লিতে বসে এই সমন্বয় কমিটি কোনও রাজ্যের বিরোধী দলগুলির উপর তা চাপিয়ে দিতে পারে না। এখান থেকে যা করা হবে, তা সামগ্রিক কৌশল রচনা করে রাজ্য স্তরে একটা দিশা দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। তামিলনাড়ু বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে সমস্যা নেই। সেখানে ইতিমধ্যেই জোট হয়ে রয়েছে। একই ভাবে কেরলকেও হিসাবের খাতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, কারণ সেখানে যুযুধান দল সিপিএম এবং কংগ্রেস। বরাবরের মতো তারাই মুখোমুখি লড়বে। কিন্তু পঞ্জাব, দিল্লি এবং বাংলার চিত্র ভিন্ন। পঞ্জাবে আপ এবং কংগ্রেস কেউই কারও সঙ্গে জোট করতে চায় না। গুজরাতে আপ চায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে, তাতে সম্মত কংগ্রেস। অন্য দিকে বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েই রয়েছে। ফলে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে চুলচেরা আলোচনা করে এই সব ক্ষেত্রে আসন রফার সূত্র তৈরি করবে বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানাচ্ছেন।
সম্প্রতি ভারতমণ্ডপমে রাষ্ট্রপতির দেওয়া জি২০ ভোজসভায় মমতার যাওয়া এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এক টেবিলে বসার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। এই বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা পবন খেরার কাছে মন্তব্য চাওয়া হলে তিনি মুখ খোলেননি। কারণ, বিষয়টি কংগ্রেসের পক্ষেও অস্বস্তিকর। হিমাচলের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীও ওই ভোজসভায় ছিলেন। ছিলেন নীতীশ কুমার, এম কে স্ট্যালিন, হেমন্ত সোরেনের মতো ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। ফলে অধীরকে সমর্থন করতে হলে গোটা বিষয়টি নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হবে।
তৃণমূল যে এখনও ইন্ডিয়া জোটের ছোট কমিটিগুলিতে প্রার্থী দেয়নি, তা নিয়ে সে ভাবে মাথা ঘামাচ্ছে না কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই প্রচার কমিটির মুম্বই এবং দিল্লিতে বৈঠক হয়ে গিয়েছে। তাতে শিবসেনার আদিত্য ঠাকরে সদস্য না-হয়েও যোগ দিয়েছিলেন। ফলে এই কমিটগুলির কাজকর্ম খুবই নিয়মতান্ত্রিক না রেখে বরং কিছুটা স্থিতিস্থাপক রাখারই চেষ্টা করছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, তৃণমূল তাদের সুবিধামতো পরে যোগ দিলেও কোনও সমস্যা নেই, কাজএগিয়ে চলছে।