ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভায় কেন্দ্রের আনা অপরাধী শনাক্তকরণ বিলের বিরুদ্ধে ডিএমকে অন্যান্য বিরোধীদের সঙ্গে একজোট হয়ে ভোট দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতি এক বিষয়। জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতি অন্য। সেখানে সনিয়া গান্ধীর প্রতি একান্ত আনুগত্য গোপন রাখার কোনও চেষ্টাই করছেন না ডিএমকে সভাপতি তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। শুধু তাই-ই নয়, সম্প্রতি সিপিএমের মঞ্চে দাঁড়িয়ে, বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের পাশে নিয়ে তিনি ডাক দিয়েছেন দক্ষিণ ভারতের অ-বিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে জোট গড়ার। ভবিষ্যতের জাতীয় জোটের নেতৃত্বের দৌড়ে যথেষ্ট সক্রিয় স্ট্যালিন। ফলে কংগ্রেসের প্রতি ‘অ্যালার্জি’ পোষণ করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সমস্যা হচ্ছে স্ট্যালিনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজেপি-বিরোধী মিছিলে হাঁটতে। ভবিষ্যতে এই অস্বস্তি আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে।
প্রায় দু-সপ্তাহ আগে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতাদের চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রীর চিঠির জবাব ডিএমকে কেন, এখনও কোনও বিরোধী দলের থেকেই মেলেনি। স্ট্যালিন এরই মধ্যে দিল্লিতে তাঁদের দলীয় দফতরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সনিয়া গান্ধীকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। সব ছবিতেই দেখা গিয়েছে, সনিয়া ডিএমকে-র অনুষ্ঠানের পুরোভাগে। বিষয়টি আগাম আঁচ করেছিল তৃণমূল। সে কারণেই দলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার দলনেতা যথাক্রমে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ’ও ব্রায়েনকে ডিএমকে-র পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তাঁরা যাননি। দলের থেকে মনোনীত করা হয় সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে।
সম্প্রতি সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনার মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্ট্যালিন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক’ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই এবং দাবি আদায়ের জন্য রাজ্যগুলিকে নিয়ে জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। ওই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা কে ভি টমাস। তাঁরাও প্রত্যাশিত ভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব। গোটা বিষয়টির দিকে নজর রাখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
সূত্রের খবর, মমতার চিঠি পাওযার পর এনসিপি-র শীর্ষ নেতা শরদ পওয়ার কিছুটা সক্রিয় হয়েছিলেন। তিনি তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের এক সাংসদকে জানিয়েছিলেন, মুম্বইয়ে এই বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের বাড়িতে এই বৈঠক করা যেতে পারে বলেও প্রাথমিক ভাবে কথা হয়েছিল।
কিন্তু তার পরই ঘটনা কিছুটা অন্য মোড় নেয়। সংসদের বাজেট অধিবেশন চলাকালীন পওয়ার চলে যান মোদীর সঙ্গে দেখা করতে। তার আগেই মহারাষ্ট্রের একটি জমি দুর্নীতি মামলায় ইডি, শিবসেনার সাংসদ ও দলীয় মুখপত্র ‘সামনা’-র সম্পাদক সঞ্জয় রাউতের স্ত্রী বর্ষার ১১.৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার নেতৃত্বে এনসিপি, কংগ্রেস জোট সরকারের মন্ত্রী নবাব মালিককে ইডি আগেই গ্রেফতার করেছিল। মালিক এনসিপি নেতা। সিবিআই মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখকেও হেফাজতে নিয়েছে। এই সবের মধ্যেই মোদীর সঙ্গে পওয়ার দেখা করতে যাওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে, পওয়ার কি সিবিআই-ইডির চাপের মুখে আপস করতে চাইছেন?
আপাতত পওয়ারকেও বিজেপি-বিরোধী বৈঠক করতে উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না।
তবে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, দিল্লিতে নয়, মুম্বইয়েই তারা এই বৈঠকের আয়োজন করতে চাইছেন। কারণ, দিল্লিতে হলে সনিয়ার আধিপত্য ও প্রভাব বেশি থাকবে, যা তৃণমূল চাইছে না। রাজনৈতিক মহল আপাতত অপেক্ষা করছে, কবে এবং কোথায় বিজেপি-বিরোধী সমাবেশটি হয়। লোকসভা ভোটের আগে এমন বৈঠক যে ঘন ঘন হওয়া প্রয়োজন, তা আলাদা আলাদা ভাবে মনে করছে প্রায় সব বিরোধী দলই। তবে বিএসপি, বিজেডি এবং জগন্মোহন রেড্ডির দলকে বিজেপির পরোক্ষ শরিক হিসাবেই ধরছে তৃণমূল।