(বাঁ দিকে) সনিয়া গান্ধী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ঘরোয়া ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘জোট আলোচনা’ শুরু হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের। সম্প্রতি ‘ব্যাক চ্যানেল’-এ সেই আলোচনায় তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসকে বলে দিয়েছেন, তাঁরা বড়জোর তিনটি আসন ছাড়তে পারেন। বিনিময়ে অসম এবং মেঘালয় মিলিয়ে গোটা তিনেক আসন চাওয়া হচ্ছে। আলাদা করে কংগ্রেসের জোট কমিটির সঙ্গে বৈঠক করতে মমতা দিল্লিতে কোনও দূতকে পাঠাবেন না।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, কংগ্রেসকে ঘরোয়া ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের গত লোকসভায় পাওয়া দু’টি আসনে (বহরমপুর এবং মালদহ দক্ষিণ) প্রার্থী দেবে না তৃণমূল। কংগ্রেস জবাবে জানিয়েছে, দুই সংখ্যাটি অত্যন্ত কম। পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, যদি কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী মমতাকে সরাসরি অনুরোধ করেন, তা হলে আরও একটি আসন (অবশ্যই গত বার বিজেপি-র জেতা আসন) কংগ্রেসকে দেওয়া হতে পারে। এই বাড়তি আসনকে ‘সৌজন্য আসন’ বলেই চিহ্নিত করছে তৃণমূল। সে ক্ষেত্রে মেঘালয়ে (যেখানে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট শতাংশ বেশি কংগ্রেসের থেকে) এবং অসমে দু’টি আসন কংগ্রেসের কাছ থেকে চাইছে তৃণমূল। তবে এসপি-র রামগোপাল যাদব বা শিবসেনার সঞ্জয় রাউতের মতো তৃণমূলের কোনও নেতা দিল্লি গিয়ে কংগ্রেসের জাতীয় জোট কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন না।
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, বাংলা, দিল্লি এবং পঞ্জাব বাদ দিলে বাকি সব রাজ্যেই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের সমঝোতা হবে বিভিন্ন বিরোধী দলের মধ্যে। এই তিনটি রাজ্যে আপ এবং তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা এবং দরকষাকষি চলছে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব আশাবাদী, পশ্চিমবঙ্গে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হবে। সে জন্য সব রকম চেষ্টা চলছে। কংগ্রেস হাই কমান্ড ইতিমধ্যেই গোটা দেশের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে এক জন করে সমন্বয়কারী নিয়োগ করেছে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের সমন্বয়কারীদের দিল্লিতে প্রশিক্ষণের জন্য ডাকা হয়েছে।
এ দিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নিয়মিত মমতাকে আক্রমণের বিষয়টি নিয়ে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তৃণমূলে। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব অধীরের সঙ্গেও কথা বলে বোঝাচ্ছেন যে, ইন্ডিয়ার সব শরিককে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। যদিও এটাও মাথায় রাখা হচ্ছে, অধীরকেও বাংলায় তাঁর ভোটব্যাঙ্ককে অটুট রাখার জন্য রাজনীতিটা করতেই হবে।
কংগ্রেসের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনায় যুক্ত তৃণমূলের এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার কথায়, “আমরা স্পষ্ট জানিয়েছি, বিজেপিকে হারানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়তে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের কোনও সাংসদ, বিধায়ক বা মন্ত্রী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ অথবা কংগ্রেস বিরোধী কোনও মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি এটাও কংগ্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলার রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সীমাবদ্ধতাও তাদের বুঝতে হবে। তারা বাংলায় অত্যন্ত দুর্বল। ৩৯টি আসনে তাদের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার চার শতাংশের নীচে। একটিতে ১০ শতাংশের তলায়। দু’টিতে তারা জিতেছে।”