ব্রিগেডের মঞ্চে শত্রুঘ্ন সিন্হা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
এখনও তিনি বিজেপি সাংসদ। ক’দিন আগেই সংসদে সংরক্ষণ নিয়ে সংবিধান সংশোধনীতে দলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা আজ ব্রিগেডের সভা থেকে রাহুল গাঁধীর সুরে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে নাম না করে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন রাহুল গাঁধীর। পাল্টা পদক্ষেপে বিজেপি দলবিরোধী কাজের অভিযোগে শত্রুঘ্নের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেবে বলে জানালেও, প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন কেন হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন মোদী, অমিত শাহেরা?
মোদী সরকারের শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন-স্বর শত্রুঘ্ন। ঘরোয়া মহলে কিংবা সভা-সমাবেশ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি থেকে নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বারবার মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি। আর আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সভায় হাজির হয়ে মোদীর বিরুদ্ধে আরও সুর চড়ালেন ‘বিহারিবাবু’। নিন্দা করলেন নোটবন্দির। রাহুল গাঁধীর মতোই জিএসটি-কে বললেন ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’। রাফাল চুক্তিতে যে ভাবে অনিল অম্বানীর ফায়দা করে দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েও রাহুলের সুরে শত্রুঘ্ন বলেন, ‘‘চুক্তির দশ দিন আগে তৈরি হওয়া সংস্থা কী ভাবে রাফাল চুক্তির শরিক হল সেই জবাব প্রধানমন্ত্রীকেই দিতে হবে। কেউ দোষী, তা বলছি না। আবার কেউ দোষী নয়, তা-ও বলছি না। কিন্তু যদি এ ভাবে তথ্য লুকোনোর চেষ্টা করা হয়, তা হলে বলতেই হবে চৌকিদারই আসলে চোর।’’ সভাপতি হয়েই যে ভাবে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়— তিন রাজ্যে জয় এনে দিয়েছেন দলকে, তারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন শত্রুঘ্ন।
ব্রিগেডে শত্রুঘ্নের বক্তব্য শেষ হতেই তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে বলে ঘোষণা করেন বিহারের বিজেপি সাংসদ রাজীবপ্রতাপ রুডি। বলেন, ‘‘বর্ষীয়ান ওই সাংসদ হুইপ জারি হলে সংসদে সবার আগে এসে বসে থাকেন। যাতে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ না ওঠে। আবার নিজের স্বার্থে তিনি দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। বিষয়টি মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না দল। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তা যে হতে পারে, সেটা এ দিন ব্রিগেড মঞ্চ নিজেও বলেছেন শত্রুঘ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘মঞ্চে উপস্থিত যশবন্ত সিন্হাও বলছিলেন, বিগ্রেডে উপস্থিত থাকার জন্য আমাকে বহিষ্কৃত করতে পারে দল। যদি সত্যি কথা বলা বিদ্রোহ হয়, তা হলে আমি বিদ্রোহী। কারণ আমার জবাবদিহি জনতার প্রতি। তাই আপসের কোনও প্রশ্ন নেই।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির দ্বন্দ্বে ইন্ধন মমতার
শত্রুঘ্ন চাইছেন দল তাঁকে বহিষ্কৃত করুক। আসন্ন নির্বাচনে দল যে তাঁকে টিকিট দেবে না সেটা নিশ্চিত। তাই আরজেডি-র টিকিট পেতে লালুপ্রসাদ ও তেজস্বী যাদবের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন তিনি। ঘনিষ্ঠদের মুখ দিয়ে বলিয়ে রেখেছেন, বিজেপি টিকিট না দিলেও, তিনি পটনা সাহিব থেকেই নির্বাচনে লড়বেন। কংগ্রেস ও আপ শিবিরের সম্মতিতে শত্রুঘ্ন ও যশবন্ত সিন্হাকে দিল্লিতে দু’টি আসনে টিকিট দেওয়ার একটা ভাবনাচিন্তাও চলছে। সেটা মাথায় রেখে আজ একই সঙ্গে কেজরীবাল ও কংগ্রেস দু’পক্ষের প্রশংসায় সরব হন তিনি।