Badlapur Sexual Assault Case

এনকাউন্টার বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না! বদলাপুর-কাণ্ড নিয়ে পুলিশকে ভর্ৎসনা বম্বে হাই কোর্টের

বদলাপুর-কাণ্ডের অভিযুক্তের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল মহারাষ্ট্রের রাজনীতি। উঠেছে নানা প্রশ্ন। পুলিশের ‘এনকাউন্টার’ তথ্য, মানতে নারাজ অনেকেই। মৃতের পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত ভাবে তাদের ছেলেকে খুন করা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০৩
Share:

পুলিশের এই গাড়িতেই অভিযুক্তকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল হেফাজতে। —ফাইল চিত্র।

পুলিশ হেফাজতে বদলাপুর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্তের মৃত্যু নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল বম্বে হাই কোর্ট। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিচারপতি রেবতী মোহিতে ডেরে এবং বিচারপতি পৃথ্বীরাজ চহ্বণের ডিভিশন বেঞ্চ। এই ঘটনাটিকে এনকাউন্টার বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না বলেই মত আদালেতের। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতিদের প্রশ্ন, ‘‘প্রিজ়ন ভ্যানে চার জন পুলিশকর্মী ছিলেন। তাঁরা অভিযুক্তকে কাবু করতে পারলেন না? তাঁর শরীরে এত শক্তি ছিল?’’

Advertisement

কী ভাবে পুলিশের কাছ থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়ে তা আনলক করে গুলি চালিয়েছিলেন অভিযুক্ত, তার বর্ণনাও আদালতে দিয়েছে রাজ্য। তা শুনে আদালতের মন্তব্য, ‘‘এটি বিশ্বাস করা কঠিন। পিস্তলের স্লাইডার টানার জন্য যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ প্রশিক্ষণ ছাড়া পিস্তল চালাতে পারেন না। আপনারা বলছেন, অভিযুক্ত তিনটি গুলি ছুড়েছেন। দেখা যাচ্ছে তাতে এক জন পুলিশকর্মীই আহত হয়েছেন?’’

আদালতের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তকে নিরস্ত্র করতে হাঁটুর নীচে গুলি চালানো যেত। কিন্তু রাজ্যের যুক্তি, সেই সময় এত ভাবার সময় ছিল না। এর পরই আদালত প্রশ্ন তোলে, ‘‘আমরা কী ভাবে বিশ্বাস করব, চার জন পুলিশকর্মী মিলে অভিযুক্তকে কাবু করতে পারেননি? তিনটি গুলি চালানোর আগে পর্যন্ত পুলিশ কী করছিল? তাঁকে কাবু করতে পারল না? তিনি এত শক্তিশালী ছিলেন না।’’ এর পরই আদালত জানায়, এই ঘটনাকে কখনওই এনকাউন্টার বলা যাবে না।

Advertisement

বদলাপুরের ঘটনা নিয়ে গত দু’মাস ধরে উত্তাল মহারাষ্ট্র। সেই ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিও বেশ উত্তপ্ত। অভিযুক্তের এনকাউন্টারের পরই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। তাদের দাবি, এটি ভুয়ো এনকাউন্টার। কী ভাবে হাতকড়া পরানো থাকা সত্ত্বেও পুলিশকে গুলি করলেন অভিযুক্ত? যদিও পুলিশের পাল্টা দাবি, এক জন পুলিশ আধিকারিকের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালান অভিযুক্ত। আর এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপড়েন। তার মধ্যেই আদালতের এই মন্তব্য এবং পুলিশকে ভর্ৎসনা মামলাটিকে একটি নতুন মাত্রা দিল বলে মনে করছেন অনেকে।

পুলিশের ‘এনকাউন্টার’ তথ্য, মানতে নারাজ অনেকেই। মৃতের পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত ভাবে তাদের ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এই নিয়ে হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন মৃতের বাবা। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতিদের একের পর এক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয় পুলিশ। শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, ঘটনার এক দিন আগেই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন অভিযুক্ত। তবে পুলিশ যে অভিযোগ করছে, সেই কাজ করার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না তাঁর। আইনজীবীর কথায়, ‘‘বদলাপুরের যৌন নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, কে দোষী সাব্যস্ত হবেন। আইনের শাসন অবশ্যই প্রাধান্য পাওয়া উচিত। পুলিশের এ ভাবে গুলি চালানোর ঘটনা খারাপ উদাহরণ স্থাপন করল।’’

আদালত রাজ্যের কাছে জানতে চায়, যে রাস্তায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল কি না। রাজ্য জানায়, সব সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হবে। আদালত বলে, ‘‘আমরা আশা করব তদন্ত নিরপেক্ষ হবে। যদি আমরা কিছু বুঝি তবে আমরা এ ব্যাপারে নির্দেশ দেব।’’ রাজ্য কেন এখনও এই ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে দিল না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে আদালত।

প্রসঙ্গত, বদলাপুরের নার্সারির দুই পড়ুয়াকে যৌন নিগ্রহের অভিযোগে ধৃত যুবককে সোমবার সন্ধ্যায় তালোজা জেল থেকে নিজের হেফাজতে নিতে গিয়েছিল পুলিশ। অভিযুক্তের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দায়ের করা একটি মামলায় তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। পুলিশ যখন বদলাপুর-কাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে নিয়ে থানায় ফিরছিল, অভিযোগ, সে সময়ই এক কনস্টেবলের বন্দুক কেড়ে নেন তিনি। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান এবং পালানোর চেষ্টা করেন। অভিযোগ তাঁর ছোড়া গুলিতে এক পুলিশকর্মী আহত হন। তাঁকে আটকাতে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। সেই গুলিতে আহত হন অক্ষয়। হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement