যানজট সামলানোর কাজ করছেন চিকিৎসক কৃষ্ণ যাদব।
একটি ঘটনা, আর সেই ঘটনাই এক চিকিৎসকের পেশা খানিকটা বদলে দিয়েছে। এখন তিনি একাধারে চিকিৎসাও করেন, আবার যানজটও সামলান! অবাক লাগলেও এ ভাবেই দু’টি কাজ সামলান চিকিৎসক কৃষ্ণ যাদব। প্রথম পেশার সঙ্গে তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই জড়িত। তবে দ্বিতীয় পেশার সঙ্গে কিন্তু তাঁর পরিচয় ২০২২ সাল থেকে।
২০১১-র অক্টোবর। প্রতি দিনের মতো রোগী দেখে বাড়ি ফিরছিলেন চিকিৎসক কৃষ্ণ। ফেরার পথে যানজটের মধ্যে পড়েন তিনি। হঠাৎই তাঁর কানে অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের আওয়াজ ভেসে আসে। ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি দেখেন রোগী নিয়ে সেই যানজটে আটকে রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সটি। চুপ করে বসে থাকেননি কৃষ্ণ। নিজের গাড়ি থেকে নেমে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য ছুটে যান। বেশ কয়েক জন গাড়িচালককে অনুরোধ করে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে জায়গা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। এক জন চিকিৎসক হয়ে চোখের সামনে এই পরিস্থিতি দেখে খুবই অসহায় লাগছিল তাঁর।
সে দিনের মতো যানজট কাটিয়ে কৃষ্ণ বাড়ি ফিরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও একটা খচখচানি ছিল, রোগী ঠিক মতো হাসপাতালে পৌঁছতে পারল তো? আশঙ্কাটা যেন কাকতালীয় ভাবে পর দিন সকালেই মিলে গিয়েছিল। খবরের কাগজ হাতে পেয়ে পড়ার সময় এক জায়গায় চোখ আটকে গিয়েছিল কৃষ্ণর। আঁতকে উঠেছিলেন তিনি। মুহূর্তে এক বিষণ্ণতা গ্রাস করেছিল তাঁকে। যে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে তিনি যানজট থেকে বার করার চেষ্টা করেছিলেন, সেই অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা রোগীর মৃত্যু হয়েছিল সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে। এই ঘটনা তাঁকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। জন্ম দিয়েছিল তাঁর আর এক সত্তার।
এর পরই কৃষ্ণ সিদ্ধান্ত নেন, চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারেরও কাজ করবেন। কিন্তু চাইলেই যে সব হয়, এমনটা নয়। কৃষ্ণর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। তাঁর সিদ্ধান্তের কথা পরিবারের সদস্যদের জানাতেই ঘোর আপত্তি ওঠে। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁদের শেষমেশ বোঝাতে সমর্থ হন। সেই ঘটনার ঠিক ১১ বছর পর ২০২২ সালে বিনা পারিশ্রমিকে ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারের আংশিক দায়িত্ব সামলানোর ভার নেন কৃষ্ণ। প্রতি দিন তিন ঘণ্টা করে উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় ট্র্যাফিক সামলান এই চিকিৎসক।
কৃষ্ণ জানান, যে হেতু ট্র্যাফিক পুলিশের সরকারি পোশাক ছাড়াই এ কাজ করেন, তাই এই কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে।