প্রতীকী ছবি
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে ওঠায় সোমবার ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে আফগানিস্তান নিয়ে প্রস্তাব গৃহীত হল। আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার এবং তালিবানের কাবুল দখলের পরে এই প্রথম রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গৃহীত হল। তবে রাশিয়া ও চিন প্রস্তাব গ্রহণে বিরত থাকে। ফলে ৫ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ৩-২ বিভাজন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে মোট ১৩ সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবটি সমর্থন করে।
আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের পক্ষ থেকে পেশ করা এই প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদ দাবি করেছে, আফগানিস্তানের মাটি যেন অন্য কোনও দেশকে আঘাত করা বা আক্রমণ করার কাজে ব্যবহৃত না হয়, যেন জঙ্গিদের ঘাঁটি না হয়ে ওঠে। নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তালিবান নেতৃত্ব সব ইচ্ছুক আফগান এবং বিদেশি নাগরিককে নিরাপদে কাবুল ছাড়তে দেবেন, এই প্রত্যাশা রাখা হয়েছে প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে নারী-শিশু-সংখ্যালঘু-সহ সামগ্রিক ভাবেই নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষিত যেন থাকে, এই কথাও মনে করিেয় দেওয়া হয়েছে। শ্রিংলা বলেন, অাফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের কথা, বিশেষত হিন্দু ও শিখদের কথা গুরুত্ব পেয়েছে প্রস্তাবে। সেই সঙ্গে আফগান মাটি থেকে অন্য দেশকে আঘাত না করা এবং সন্ত্রাসে মদত না দেওয়ার যে আহ্বান, তা ভারতের পক্ষে বিশেষ করে তাৎপর্যপূর্ণ।
রাশিয়া ও চিন এই প্রস্তাব গ্রহণে বিরত থাকল কেন? রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের উপরাষ্ট্রদূত গেং শুয়াংয়ের দাবি, তড়িঘড়ি এই প্রস্তাব গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেই চিনের ‘গভীর সংশয়’ আছে। রাশিয়ার দাবি, প্রস্তাবের খসড়া তৈরির সময়ে তাদের বক্তব্য গুরুত্ব পায়নি।
অগস্ট মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যানের পদে ভারত ছিল। সোম ও মঙ্গলবার শেষ দু’দিন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব করতে ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বেই নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ফলে ভারতের ভূমিকার দিকেও কূটনীতিকদের নজর ছিল।
কাবুলে আরও সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে প্রস্তাবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রাণহানি রোখার জন্য এবং আন্তর্জাতিক শিবিরের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে নিরাপত্তা জোরদার করতে সাহায্য করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। ফ্রান্স ও ব্রিটেন কাবুল বিমানবন্দর ঘিরে একটি ‘সেফ জ়োন’ তৈরির দাবি তুলেছে। যার দায়িত্বে তালিবান যোদ্ধাদের বদলে আফগানিস্তানের প্রশাসন থাকবে। তবে তেমন কিছু হওয়া কঠিন।
১৫ অগস্ট তালিবানের কাবুল দখলের পরে নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে তালিবান ও অন্য আফগান গোষ্ঠীর কাছে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তারা যেন সন্ত্রাসবাদে মদত না দেয়। এর পরে দু’দিন আগের বিবৃতিতে ওই একই আহ্বান জানানো হয় শুধুমাত্র অন্য আফগান গোষ্ঠীগুলির কাছে। সেখানে তালিবানের নামোল্লেখ ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক শিবির তালিবানকে ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে কি না, সে প্রশ্ন ওঠে। কূটনৈতিক শিবিরের খবর, সন্ত্রাসবাদে মদতের প্রশ্নে তালিবানের নাম সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে চিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। আপাতত ভারত-সহ আন্তর্জাতিক শিবিরের প্রধান অগ্রাধিকার নিজের দেশের নাগরিকদের উদ্ধার করে আনা। সেই সঙ্গে আফগান নাগরিকেরা আশ্রয় নিতে চাইলে তাঁদেরও সাহায্য করা।