এক লক্ষের বেশি জনবহুল শহরগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রথম চারশোর মধ্যেও কলকাতার জায়গা হয়নি। —ফাইল চিত্র।
দেশের সবচেয়ে নোংরা দশটি শহর পশ্চিমবঙ্গে। তার মধ্যে রয়েছে কলকাতাও। নোংরাতম শহর হল হাওড়া। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে এই তথ্যই সামনে এসেছে।
আজ কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ২০২৩-এর ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ’-এর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। প্রকাশ্যে শৌচ বন্ধ করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ, প্লাস্টিক বর্জ্যের মোকাবিলা, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য শৌচাগারের মতো ৪৬টি মাপকাঠিতে দেশের পুরসভাচালিত শহরগুলির বিচার করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে শহরগুলির মধ্যে ইন্দোর এ বারও প্রথম। তার সঙ্গে যৌথ ভাবে প্রথম স্থানে সুরাত।
তৃতীয় স্থানে নবি মুম্বই।
আর কলকাতা?
প্রথম পাঁচ, দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ বা একশোটি শহরের মধ্যে থাকা দূরের কথা। এক লক্ষের বেশি জনবহুল শহরগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রথম চারশোর মধ্যেও কলকাতার জায়গা হয়নি। ৪৪৬টি শহরের মধ্যে কলকাতার স্থান ৪৩৮-তম। একেবারে শেষ স্থানে রয়েছে হাওড়া। যার অর্থ, গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে নোংরা শহর হল হাওড়া।
পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে শেষ দশে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দশটি শহর— ভাটপাড়া, কলকাতা, কাঁচড়াপাড়া, বিধাননগর, রিষড়া, আসানসোল, কৃষ্ণনগর, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী ও হাওড়া। এই শহরগুলি ৪৩৭ থেকে ৪৪৬-তম স্থানে রয়েছে। যার অর্থ, দেশের দশটি নোংরাতম শহরই পশ্চিমবঙ্গে। এদের সামান্য আগে রয়েছে বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি ও শ্রীরামপুর। এক লক্ষের কম জনসংখ্যার শহর ও গঙ্গার তীরবর্তী পুরসভাচালিত শহরের প্রতিযোগিতাতেও রাজ্যের শহরগুলি পিছিয়ে রয়েছে।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পরে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, কেন্দ্রের রিপোর্টেই কলকাতা নিরাপদতম শহরের তকমা পাওয়ার পরে কলকাতা তথা রাজ্যের শহরগুলিকে বদনাম করতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের যুক্তি, রাজ্যের পুরসভাগুলির রিপোর্টের ভিত্তিতেই স্থান ঠিক হয়েছে।
এক লক্ষের কম জনসংখ্যার শহরের প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গের পুরসভাচালিত শহরগুলির হাল তথৈবচ। ৩,৯৭০টি শহরের মধ্যে ৩৫০০ শহরেরও পরে স্থান পেয়েছে তারকেশ্বর, কাটোয়া। শেষ একশোটি শহরের মধ্যে রয়েছে আলিপুরদুয়ার, আরামবাগ। ‘স্বচ্ছ সর্বেক্ষণ ২০২৩’-এর রিপোর্ট বলছে, এক লক্ষের কম জনসংখ্যার শহরগুলির মধ্যে পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে প্রথম স্থানে মহারাষ্ট্রের সাসওড়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ছত্তীসগঢ়ের দুর্গ জেলার পাটন এবং মহারাষ্ট্রের লোনাভালা।
গঙ্গার তীরবর্তী ৮৮টি শহরের মধ্যে স্বচ্ছতার মাপকাঠিতে কে কোথায়, তারও বিচার হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে নোংরাতম শহর হিসেবে জায়গা পেয়েছে বিহারের ছাপড়া। শেষ দশের মধ্যে বাকি ন’টিই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পুর-শহরের দখলে। এর মধ্যে রয়েছে হুগলি-চুঁচুড়া, উলুবেড়িয়া, গয়েশপুর, ডায়মন্ড হারবার, হাওড়া, কামারহাটি, চাকদহ, হলদিয়া ও ধুলিয়ান। ৮৮টি শহরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবচেয়ে এগিয়ে চাঁপদানি। তবে তার স্থান ২৫টি শহরের পরে। রাজ্যের ৪০টি গঙ্গা-তীরবর্তী শহরের অধিকাংশের স্থান শেষ সারিতে। প্রথম প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসী পুরসভা। তার পরে প্রয়াগরাজ, বিজনৌর, হরিদ্বার, কনৌজ।
পূর্বাঞ্চলের শহরগুলির মধ্যেও রাজ্যের কোনও শহর সামনের সারিতে নেই। সেখানেও বিভিন্ন শ্রেণিতে ওড়িশার চিলকিটি, ছত্তীসগঢ়ের আরং, কুমহারি, মহাসমন্দ বাজিমাত করেছে।
কেন এত পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের শহরগুলি? কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সমস্ত শহরের পুরসভা থেকে পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিভিন্ন মাপকাঠিতে শহরগুলি নম্বর পেয়েছে। এ বার যেমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের মতামতেও জোর দেওয়া হয়েছে। কোন কোন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কত নম্বর, তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। এ ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দের স্থান নেই। কোনও শহর পিছিয়ে থাকলে তার দায় সেই শহরের পুরসভা বা পুরনিগমের।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা দাবি, ‘‘উত্তরপ্রদেশের শহরগুলো মানুষ দেখেনি। দিল্লি, মুম্বইয়ের ভিতরটা মানুষ দেখেনি। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো কলকাতাকে নিরাপদতম শহর ঘোষণা করায় বদনাম করতে মরিয়া কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। অথচ ব্যক্তিগত ভাবে বহু বিদেশের মানুষ শহরে পা রেখে কলকাতার পরিচ্ছন্নতার প্রশংসা করেন। এখনকার হাওড়া শহরটাও ভাল করে ঘুরে দেখলে বোঝা যাবে, সেটা কতটা পরিচ্ছন্ন।”