উত্তপ্ত সন্দেশখালি। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে হওয়া মহিলাদের উপরে অত্যাচার, কৃষক আন্দোলন ও মণিপুর নিয়ে আলোচনা করতে ভোটের আগে বৈঠকে বসছে আরএসএসের নীতি নির্ধারক গোষ্ঠী অখিল ভারতীয় প্রতিনিধি সভা। আগামী ১৫-১৭ মার্চ নাগপুরে ওই বৈঠক হবে। আগামী বছর আরএসএসের একশো বছর পূর্তি হতে চলেছে। ফলে আগামী এক বছর দেশ জুড়ে কী ভাবে প্রচার চালানো হবে তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার ঠিক আগে হতে যাওয়া ওই বৈঠকে সঙ্ঘের নীতিগত বিষয়গুলি ছাড়াও মূলত সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সূত্রের মতে, বৈঠকে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হওয়ার কথা। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশের কারণে জনসংখ্যার ভারসাম্য টলে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সরব সঙ্ঘ পরিবার। এ ক্ষেত্রে মহিলাদের উপরে নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মহিলারাই এগিয়ে আসায় বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। সূত্রের মতে, গেরুয়া শিবির চাইছে ওই এলাকাগুলিতে নির্যাতিত হিন্দু মহিলারা আরও এগিয়ে এসে মুখ খুলুন। রাজনীতিকদের মতে, সন্দেশখালির মহিলারা যত বেশি অত্যাচারের বিষয়ে সরব হবেন তত লোকসভার আগে মেরুকরণের হাওয়া বইবে পশ্চিমবঙ্গে। লাভ
হবে বিজেপির। সেই কারণে সন্দেশখালির বিষয়টি নিয়ে বিশদে আলোচনার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মণিপুরে যে ভাবে মেইতেইদের উপরে অত্যাচার হচ্ছে, যে ভাবে বিদেশ থেকে আসা অস্ত্রের সাহায্যে কুকি জঙ্গিরা হামলা চালাচ্ছে তা নিয়েও সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লোকসভার পরেই হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই রাজ্যে কৃষকেরা কেন্দ্র-বিরোধী ধর্নায় বসে আছেন। তাঁদের আটকাতে বিভিন্ন সময়ে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে হরিয়ানার বিজেপি শাসিত মনোহরলাল খট্টরের সরকারকে। এই আবহে প্রতিনিধি সভার বৈঠকে বিষয়টি ওঠার কথা রয়েছে। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ ভারতীয় কিষাণ সঙ্ঘ চাষীদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার পক্ষে থাকলেও, যে ভাবে কৃষকেরা সময়ে-সময়ে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছেন তার সমালোচনায় সরব হয়েছে ওই কৃষক সংগঠন। এখন লোকসভা ও তার পরে বিধানসভা ভোটের আগে কোন পথে এগোলে রফাসূত্র বার হতে পারে তা নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে প্রতিনিধি সভা।
পাশাপাশি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। গোটা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে সরব আরএসএস। ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ড সরকার সে রাজ্যের বিধানসভায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পাশ করিয়েছে। গোটা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন চালুর প্রশ্নে আগামী দিনে কী ভাবে এগোনো যায় তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করার কথা ওই প্রতিনিধি সভার সদস্যদের। সূত্রের মতে, বৈঠকে বিজেপির পক্ষ থেকে জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সূত্রের মতে, আরএসএস চায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, জনসংখ্যা আইন, স্বদেশির ব্যবহার বাড়ানোর মতো বিষয়গুলি যাতে বিজেপির লোকসভা ইস্তাহারে জায়গা করে নিতে পারে। নড্ডার উপস্থিতিতে ওই বিষয়গুলি আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আরএসএসের একশো বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশ জুড়ে কমপক্ষে এক লক্ষ শাখা গঠনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বিশেষত মহিলাদের আরএসএসে যোগদান বৃদ্ধিতে মহিলা শাখার সংখ্যা বৃদ্ধির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।