—প্রতীকী ছবি।
জম্মু-কাশ্মীরে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষার হার ক্রমশ কমছে। সর্বশেষ সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের প্রকাশিত সর্বশেষ রিপোর্ট, ২০২০-২১ সালের উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সর্বভারতীয় সমীক্ষাতে এই ভয়াবহ ছবি ধরা পড়েছে। বার্ষিক রিপোর্টটিতে দেখা গিয়েছে, উচ্চশিক্ষায় পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্তিকরণ কমে ৩২.৯২ শতাংশ হয়েছে। শেষ পাঁচ বছরের রিপোর্টে সবচেয়ে কম। আগে কিন্তু ছবিটা উল্টোই ছিল। ২০১৬-১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলে মুসলিমদের উচ্চশিক্ষার হার ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছিল। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ হয়েছিল, ৪৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯ সালের অগস্ট মাসের পর থেকে এই হার পড়তে থাকে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষায় নাম নথিভুক্তিকরণ কমপক্ষে ৪৭,৩০০ কমে যায়। এই রিপোর্টে যে অস্বস্তিকর সত্যি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা, সমাজবিজ্ঞান— সব বিষয়েই পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্তিকরণ কমছে।
অমর সিংহ কলেজের স্নাতক স্তরের পড়ুয়া জুনেদ আহমেদ সোফি বলেন, ‘‘যে সমস্ত পাঠ্যক্রম পড়ানো হয়, তার কোনও বাজারমূল্য নেই। ওর জোরে বেসরকারি কাজের বাজারে মানুষ চাকরি পান না। আর সরকারি চাকরিতে অর্ধেক আসন তফসিলি জাতি ও জনজাতি-ভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত। ফলে চাকরি পাওয়ার সুযোগ একেবারেই কম।’’ স্নাতকোত্তর পাশ আফরা বলেন, ‘‘দশকের পর দশক ধরে একটা অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। একটা অর্থনীতি তৈরির জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, সেটা তৈরি হচ্ছে না। কাজের বাজার তৈরি হচ্ছে না।’’ আফরা তবু আশাবাদী, কিন্তু তাঁরও চোখেমুখে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা স্পষ্ট। আফরার বন্ধু ওয়ালিদ বলেন, ‘‘ভারতের মূল ভূখণ্ডেও আমাদের জন্য পরিস্থিতি খুব একটা অনুকূল নয়।’’
মধ্য কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, অধ্যাপক জি এম ভাট জানান, জম্মু-কাশ্মীরে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার কমার নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই। কাশ্মীরের মুসলিম সম্প্রদায়ের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়েছে, এমন যুক্তি দেওয়াও ঠিক নয়। ভাটের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, ‘‘শহরাঞ্চলের মেয়েরা উচ্চশিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হন। কিন্তু ছেলেরা বেশি চাকরির খোঁজ শুরু করেন বা পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন।’’ কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এ জি মাধোশের বক্তব্য, মুসলিম যুবসম্প্রদায়ের জীবনদর্শন বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাও পাল্টাচ্ছে।