প্রতীকী ছবি
নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম ‘মাস্টারস্ট্রোক’ নোট বাতিলের পরেও বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরেনি। বন্ধ হয়নি জাল টাকার লেনদেনও। উল্টে দেশের বাজারে জাল নোটের ব্যবহার বেড়েছে বহু গুণ।
বিরোধীরা নয়। তথ্য দিয়ে এ কথা জানিয়ে দিল দেশের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে দেশে ৫০০ টাকার জাল নোটের পরিমাণ বেড়েছে ১০১.৯ শতাংশ! ২০০০ টাকার জাল নোটের বৃদ্ধি হয়েছে ৫৪.১৬ শতাংশ।
এই রিপোর্টে উদ্বেগের বড় কারণ হল, ৫০০ এবং ২০০০ টাকার জাল নোট এবং ১০, ২০, ২০০ টাকার জাল নোটের মধ্যে ব্যবধান অনেক বেশি। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ১০ টাকার জাল নোট ১৬.৪ শতাংশ, ২০ টাকার জাল নোট ১৬.৫ শতাংশ এবং ২০০ টাকার জাল নোট ১১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রিপোর্টে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ৫০ এবং ১০০ টাকার জাল নোট বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৮.৭ শতাংশ এবং ১৬.৭ শতাংশ হারে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মোটা টাকার লেনদেনে জাল নোটের রমরমা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, ২০২১-২২ সালে দেশে মোট জাল নোট মিলেছে ২,৩০,৯৭১টি। তার আগের বছরে এই সংখ্যাটা ছিল ২,০৮,৬২৫। সব থেকে বেশি জাল হচ্ছে ১০০ টাকার নোট। ৫০০ টাকার নতুন নোটের ক্ষেত্রে জাল নোটের সংখ্যা ২০২০-২১ সালের ৩৯,৪৫৩ থেকে গত বছরে এক ধাক্কায় পৌঁছেছে ৭৯,৬৬৯টিতে।
আর রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এই রিপোর্ট সামনে আসতেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘আরও একটি ব্যর্থতা’ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট সংক্রান্ত একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন তুলে ধরে টুইটারে কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী লিখেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও নোটবন্দির সাফল্য একটাই— তা ভারতের অর্থনীতিকে গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে।’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইটারে লেখেন, ‘‘ডুবতে থাকা অর্থনীতি এবং ‘নকল নোট’! ...৫০০ টাকার জাল নোট ১০১.৯% এবং ২০০০ টাকার জাল নোট ৫৪.১৬% বেড়েছে। ব্যাঙ্কে জমা পড়া ওই দুই অঙ্কের নোটের মধ্যে ৮৭.১ শতাংশই নকল। মোট নোটের মধ্যে ২১.২৩%। ‘নোটবন্দির লাইন’ শুধু সাধারণ মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়েছে।’’
ছেড়ে কথা বলেনি তৃণমূল কংগ্রেসও। নোটবন্দির ঘোষণার সঙ্গেই সঙ্গেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন, এর ফলে আখেরে ক্ষতি হবে আমজনতার এবং দেশের অর্থনীতির। এ দিন সেই বক্তব্য মনে করিয়ে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে মোদীকে নিশানা করে লেখেন, ‘নমস্কার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নোটবন্দি? মনে পড়ছে কি? কী ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন? আর আপনি কী ভাবে গোটা দেশকে জাল নোট থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট কিন্তু বলছে, জাল নোট বৃদ্ধি পেয়েছে।’ এই সংক্রান্ত একটি পরিসংখ্যানও তিনি টুইটারে দিয়েছেন। ’
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর আচমকা দেশ জুড়ে ৫০০ ও হাজার টাকার নোট রাতারাতি বাতিল করেছিলেন মোদী। তাঁর দাবি ছিল, এর ফলে কালো টাকা ফিরবে, জাল নোটের ব্যবহার বন্ধ হবে এবং জঙ্গিদের কাছে অর্থপাচার বন্ধ হবে। কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ তখনই বলেছিলেন, এমন সিদ্ধান্তে বড় ক্ষতি হবে দেশের অর্থনীতির। এ নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার পরে দাবি করেছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্য সফল না হলে ৫০ দিন পরে যে কোনও চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে জনগণের দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। সে সময় মোদী সমর্থক এবং বিজেপি নেতারা এই সিদ্ধান্তকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ বলে বিরোধীদের লাগাতার নিশানা করেছিলেন। কিন্তু সরকারেরই দেওয়া হিসেব বলছে, এর কোনওটাই হয়নি। উল্টে আচমকা নোটবাতিলের ফলে খুচরো ব্যবসায়ীরা ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বহু ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।