Brij Bhushan Sharan Singh

লোকে যা-ই বলুক, ‘রামভক্ত’ ব্রিজভূষণের শরণে বিজেপি

দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন পুলিশ যে ভাবে কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের মেরে-ধরে, টেনে-হিঁচড়ে তাঁদের অবস্থান থেকে তুলে দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৮:০৬
Share:

ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। ফাইল চিত্র।

আন্তর্জাতিক আসরে কষ্টার্জিত পদক গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারেন কুস্তিগিরেরা। কিন্তু জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতিকে বিসর্জনের কথা ভাবতেই পারে না দেশের সরকার!

Advertisement

কয়েক মাস ধরে পদকজয়ী ক্রীড়াবিদ এবং ফেডারেশনের মধ্যে কুস্তি দেখছে দেশ। দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন পুলিশ যে ভাবে কুস্তিগির সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের মেরে-ধরে, টেনে-হিঁচড়ে তাঁদের অবস্থান থেকে তুলে দিয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। প্রশ্ন উঠেছে, জনমানসে ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে দেখেও যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি, সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দল বিজেপি? আর এই সময়েই ঘোষণা হয়েছে, কুস্তি-কাণ্ডে ‘সত্য’ উদঘাটনের পক্ষে এবং ব্রিজভূষণের সমর্থনে আগামী ৫ জুন অযোধ্যায় ‘মহা জনচেতনা সমাবেশ’ করবেন সন্ত-মহন্তেরা। বিজেপি সূত্রের মতে, দেশ জুড়ে উঠতে থাকা প্রশ্নটার মূল উত্তর এই ঘোষণার মধ্যেই নিহিত!

একে তো চাপের মুখে নতিস্বীকার করে কাউকে পদ থেকে সরানোর নীতিতে চলে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। লখিমপুর-খেরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে অভিযুক্ত হলে প্রবল প্রতিবাদের মুখেও তাঁকে পদ থেকে সরানো হয়নি। অলিম্পিক এবং এশিয়াডের মতো আসরে পদকজয়ী কুস্তিগিরেরা যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, পকসো আইনে অভিযোগও হয়েছে, তবু ব্রিজভূষণের ক্ষেত্রেও একই অবস্থান। এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে ফৈজাবাদ তথা অযোধ্যায় ব্রিজভূষণের প্রবল প্রতাপ। লোকসভা নির্বাচনের আগে যে প্রতাপ অখণ্ড রাখা বিজেপি নেতৃত্বের কাছে জরুরি। তবে তিন দফায় মোট ১২ বছর কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি রয়েছেন ব্রিজভূষণ। নির্বাচন বকেয়া। নিয়ম মেনেই আর দাঁড়াতে পারবেন না সভাপতি। স্বাভাবিক ভাবেই তখন তাঁর সরে যাওয়ার পথ খোলা।

Advertisement

কইসরগঞ্জের বাহুবলী সাংসদ, ৬৬ বছরের ব্রিজভূষণ বাবরি ধ্বংসের মামলায় অভিযুক্ত। পড়াশোনার পরবর্তী ধাপ ফৈজাবাদে। এক গুচ্ছ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানোর সুবাদে উত্তরপ্রদেশের ওই অঞ্চলে তাঁর প্রভাব, অর্থবলে কোনও অভাব নেই। তার উপরে ওই বলয়ের বিজেপি নেতারা ‘পালোয়ান’ ব্রিজভূষণ সম্পর্কে বলে থাকেন, ‘‘লাঙ্গোট পে ঢিলা নেহি হ্যায়!’’ অর্থাৎ মহিলা বা যৌনাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে আসেনি অতীতে। আর অযোধ্যা এবং হিন্দু ভাবাবেগ বিজেপির জন্য মহার্ঘ তো বটেই! অযোধ্যায় আগামী জানুয়ারিতে নবনির্মিত রামমন্দিরের উদ্বোধন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে মোদী সরকার। লোকসভা ভোটের পরের বছর, ২০২৫ সালে আবার আরএসএসের শতবর্ষ। সূত্রের বক্তব্য, এমতাবস্থায় ব্রিজভূষণকে ক্ষুণ্ণ করে অযোধ্যায় কোনও বেগতিক দেখা দিক, এমন ‘ঝুঁকি’ গেরুয়া শিবির চায় না।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ব্রিজভূষণের সঙ্গে কথা বলে মীমাংসা-সূত্র বার করার চেষ্টা করেছিলেন। যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ— তাঁদের কথা কি উড়িয়ে দেওয়া যায়? ব্রিজভূষণ সরাসরিই দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। যা হচ্ছে, সেটা উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর, রাজপুত বনাম হরিয়ানার জাঠ সম্প্রদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে কোনও ভাবে সম্পর্কিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ব্রিজভূষণ জানিয়ে দিয়েছেন, তদন্ত হোক। তবে তাঁর দাবি, কুস্তিগিরদের নার্কো টেস্টেও বসানো হোক। তিনিও নার্কো টেস্ট দেবেন। সূত্রের খবর, আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে ব্রিজভূষণ এমন মন্তব্যও করেছেন যে, তাঁর যা প্রভাব-প্রতিপত্তি, তিনি চাইলে মহিলা সংসর্গ করতেই পারতেন। তার জন্য কুস্তিগির ধরে আনতে হত না!

সেই এফআইআর এবং তদন্ত এখনও দিল্লি পুলিশ দেখছে। আর ব্রিজভূষণ বলছেন, ‘‘সাক্ষীরা দেশের জন্য পদক এনেছেন। সেই পদকের পিছনে আমারও ঘাম-রক্ত আছে। পদক গঙ্গায় বিসর্জন দিয়ে দিলে তো অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে যায় না! বারবার বলছি, আমার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগের একটাও প্রমাণ হোক। আমিই আমার ফাঁসি চাইব!’’ কুস্তিগিরেরা মিথ্যা অভিযোগ করতে যাবেন কেন? সাংসদের দাবি, ‘‘ওরা আমার ছেলে-মেয়ের মতো। বাড়িতে এসেছে, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া হয়েছে, পারিবারিক বিষয়েও কত কথা হয়েছে। তার পরেও এমন অভিযোগ! আমার মনে হয়, এর পিছনে অন্য কেউ বা কারা আছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement