(বাঁ দিকে) অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং পি শরৎচন্দ্র রেড্ডি। —ফাইল চিত্র।
দিল্লির আবগারি দুর্নীতিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করেছে ইডি। কিন্তু অভিযোগ, সেই দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত পি শরৎচন্দ্র রেড্ডি গ্রেফতার হওয়ার পরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিজেপিকে চাঁদা দেওয়ায় ইডি তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইডি কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করেছিল। তার দু’এক ঘণ্টা আগেই প্রকাশিত নির্বাচনী বন্ডের তথ্যকে হাতিয়ার করে বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, ২০২২-এ আবগারি দুর্নীতির তদন্তে অরবিন্দ ফার্মা নামক ওষুধ সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর পি শরৎচন্দ্র রেড্ডিকে সর্বপ্রথম গ্রেফতার করেছিল ইডি। গ্রেফতারির পাঁচ দিন পরেই অরবিন্দ ফার্মা ৫ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনে বিজেপির তহবিলে জমা করে। এরপর কোমরে ব্যথার কারণ দেখিয়ে দিল্লি হাই কোর্ট থেকে জামিন পান রেড্ডি। ইডি তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেনি। এবং রেড্ডি আবগারি দুর্নীতির মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে যান। এরপরে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আরও ২৫ কোটি টাকা বিজেপির তহবিলে জমা করে অরবিন্দ ফার্মা।
ইডি শুক্রবার দুপুরে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে কেজরীওয়ালকে হাজির করে। সেখানে রাজসাক্ষী হিসেবে রেড্ডির বিবৃতিকেই ইডি কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। নির্বাচনে স্বচ্ছতার পক্ষে আন্দোলনকারী অঞ্জলি ভরদ্বাজ আজ এ নিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট, ২০২২-এর ১০ নভেম্বর ইডি রেড্ডিকে গ্রেফতারের পাঁচ দিন পরেই ১৫ নভেম্বর অরবিন্দ ফার্মা ৫ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। তা বিজেপির তহবিলে জমা হয়। ২০২৩-এর মে মাসে রেড্ডি দিল্লি হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করেন। কোমরে ব্যথার যুক্তি দেখিয়ে জামিন চাওয়া হলেও ইডি তার বিরোধিতা করেনি। ইডি জামিনে সায় দিয়েছে, এমন ক’টি মামলা আছে? এরপরে রেড্ডি জুন মাসে রাজসাক্ষী হয়ে যান। তার পরে অরবিন্দ ফার্মা আরও ২৫ কোটি টাকার বন্ড কিনে বিজেপির তহবিলে জমা করে। এই সব তথ্য দেখে প্রশ্ন ওঠে, আমাদের গণতন্ত্রে আজ কী চলছে!”
নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য বলছে, রেড্ডির অরবিন্দ ফার্মা মোট ৫২ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। তার মধ্যে ৩৪.৫ কোটি টাকাই বিজেপির তহবিলে জমা পড়ে। রেড্ডির অন্য সংস্থা এপিএল হেলথকেয়ার ১০ কোটি টাকার বন্ড কিনেছিল। তার পুরোটাই বিজেপির অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। সব মিলিয়ে আবগারি দুর্নীতির অন্যতম অভিযুক্ত থেকে রাজসাক্ষী হয়ে যাওয়া রেড্ডি বিজেপিকে ৪৪.৫ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন।
কেজরীওয়ালের সরকার ২০২১-এর নভেম্বরে দিল্লিতে মদ বেচার নীতি চালু করে। অভিযোগ, তাতে হাতে গোনা কিছু মদ-ব্যবসায়ীর হাতে পুরো ব্যবসা তুলে দেওয়ার রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। এই অভিযোগও ওঠে, ওই সব ডিলাররা মদ বেচার লাইসেন্সের বিনিময়ে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দেন। ইডি-র অভিযোগ ছিল, বিআরএস নেত্রী কে কবিতার মদতপুষ্ট দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু সংস্থা ঘুষ দিয়ে এই লাইসেন্স আদায় করে এবং ১০০ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের পিছনে ভূমিকা ছিল রেড্ডির।
ইডি-র আইনজীবীরা আজ কেজরীওয়ালকে আবগারি দুর্নীতির মূল মাথা প্রমাণ করতে রাজসাক্ষী রেড্ডির বিবৃতিকেই হাতিয়ার করেছেন। জবাবে কেজরীওয়ালের হয়ে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘এটা নতুন কায়দা। এক জন সাক্ষী প্রথমে কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেননি। তার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি রাজসাক্ষী হয়ে যান এবং এক সকালে তদন্তকারীদের মনের মতো
বিবৃতি দেন।’’