গোয়া রাজনীতির মঞ্চে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব আগামী দিনে কিছুটা কমবে কি? ছবি সংগৃহীত।
গোয়ার ডাবোলিম বিমানবন্দরে শনিবার সকালে যখন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর বিমান মাটি ছোঁবে, তখন তার থেকে সামান্য দূরে ‘মিশন গোয়া’ নিয়ে সরব হবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে কথা বলবেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। দু’জনেরই গোয়া সফরের উদ্দেশ্য, এই রাজ্যে ক্ষমতা থেকে বিজেপিকে হটানো। এমনিতে গোয়ার মাটিতে মমতার সঙ্গে রাহুলের দেখা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। কিন্তু অন্তত গোয়া রাজনীতির মঞ্চে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব আগামী দিনে কিছুটা কমবে কি না, গোয়ার রাজনৈতিক শিবিরে এখন প্রশ্ন সেটাই।
মমতা গোয়ার মাটিতে পা রাখার ঠিক আগেই মঙ্গল এবং বুধবার দিল্লিতে গোয়ার কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাহুল। তার পরে গোয়া প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। দলের কার্যনির্বাহী সম্পাদক অ্যালেক্স সেকোরিয়ার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেস সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে জোট করতে প্রস্তুত। আমাদের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কেউ কথা বলেননি। আমরাও কোনও দলের সঙ্গে কথা বলিনি। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে ভোটের কৌশল নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। তিনি কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন।’
সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূল এই বিবৃতির দিকে নজর রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে আজ সন্ধ্যায় গোয়ার ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের সঙ্গে মমতার কথাও হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। কোনও দল অন্য সমমনস্ক দলের সঙ্গে যোগাযোগের সেতু পুড়িয়ে দিতে চাইছে না। কিন্তু কী হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
গোয়া কংগ্রেসের মুখপাত্র ট্রোজ়ানা ডিমেলো স্পষ্ট জানাচ্ছেন, “সকলেই সকলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কথা বলার চ্যানেল বন্ধ করা কাজের কথা নয়। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা কে বলতে পারে? তবে তৃণমূল নিশ্চয় চাইবে না, এ বারে বিজেপি হটানোর যে সুবর্ণসুযোগ গোয়ায় কংগ্রেসের সামনে রয়েছে, তা নষ্ট করার দায়ভার নিজেদের কাঁধে নিতে।”
সূত্রের খবর, রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা মমতার আগামী দু’দিনের অনুষ্ঠান সূচির দিকে নজর রাখছেন। গোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক ভারপ্রাপ্ত কাযনির্বাহী সম্পাদক অ্যালেক্সো লোরেন্সোর বক্তব্য, “বিজেপিকে হারাতে জোট হওয়া সব সময় ভাল। তবে এ ব্যাপারে হাই-কমান্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” কংগ্রেস সূত্রের সাবধানী বক্তব্য, ২০১৭ সালের ভোটে জেতার পরেও অনেক ‘ভুল’ করেছে কংগ্রেস। এ বারে রাজ্যে বিজেপি বিরোধিতার হাওয়া বইছে মানেই যে তাকে সঠিক ভাবে ভোটের বাক্সে টানা যাবে, এমন নয়। তাই সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ করা হবে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এ বার ভোটে কংগ্রেসের যতটা হারানোর ভয় রয়েছে, তৃণমূলের তা নেই। তারা শূন্য থেকে শুরু করছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভোটের পরে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে মমতার ভাবমূর্তি সম্পর্কে গোয়াবাসী অবগত। তাই তাঁর দল একক ভাবে লড়লে কংগ্রেসের কিছু আসনে বিজেপিকে হারাতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করছে গোয়া কংগ্রেস। অন্য দিকে, তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “রাহুল ও তাঁর দল সম্পর্কে আসন সমঝোতা নিয়ে অ্যালার্জির মূল কারণ ঔদ্ধত্য, ‘দাদাগিরি’ এবং দর
কষাকষি করে নগণ্য সংখ্যক আসন জোটের শরিককে গছানোর চেষ্টা।” পশ্চিমবঙ্গে এ বিষয়ে নিজেদের অতীত অভিজ্ঞতা ফিরে দেখছেন তৃণমূল নেতারা।