—প্রতীকী ছবি।
সুপ্রিম কোর্ট যে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে খারিজ করে দিতে চলেছে, তা মোদী সরকার আশাই করেনি। পরিচয় গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা নিয়ে মোদী সরকার এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পরেও ৮,৩৫০ কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড ছাপানো হয়েছিল।
তথ্যের অধিকার আইনে স্টেট ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ২০২৪-এ স্টেট ব্যাঙ্ক নাসিকের সরকারি ছাপাখানা ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেস থেকে ৮,৩৫০টি নির্বাচনী বন্ড ছাপিয়েছিল। এই প্রতিটি বন্ডের মূল্য ছিল ১ কোটি টাকা। নির্বাচনে স্বচ্ছতার দাবিতে আন্দোলনকারী অবসরপ্রাপ্ত কমোডোর লোকেশ বাত্রার প্রশ্নে স্টেট ব্যাঙ্ক এই তথ্য জানিয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির শেষে ২০২৩-এর নভেম্বরে রায় সংরক্ষিত রাখে। সরকারের আত্মবিশ্বাস এতটাই বেশি ছিল যে এর পরেও ২০২৪-এ সরকার ১ কোটি টাকা মূল্যের অতিরিক্ত ৮,৩৫০টি বন্ড ছাপতে দেয়।’’
সুপ্রিম কোর্ট গত ১৫ ফেব্রুয়ারির রায়ে নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা খারিজ করে দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে স্টেট ব্যাঙ্ক এক দফা তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বন্ডের মাধ্যমে মোট ১৬,৫১৮ কোটি টাকা চাঁদার মধ্যে বিজেপি একাই অর্ধেক টাকা পেয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৮,২৫০ কোটি টাকা। আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার স্টেট ব্যাঙ্ককে প্রতিটি বন্ডকে চিহ্নিত করার সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। যার ফলে কোন শিল্প সংস্থা বিজেপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে কত টাকা দিয়েছে, তা জানা যাবে। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বিজেপির কোটি কোটি টাকা চাঁদা আয়কে ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে ‘তোলা আদায়’ ও সরকারি বরাতের বিনিময়ে ‘ঘুষ’ বলে তকমা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, কংগ্রেসও ১৬০০ কোটি টাকা পেয়েছে। রাহুল গান্ধী ব্যাখ্যা করুন, তিনি কোথা থেকে এত টাকা তোলা আদায় করেছেন। শাহের দাবি, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে ইন্ডিয়া জোট মুখ লুকোনোর জায়গা পাবে না। সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের চালু করা নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা খারিজ করে দিলেও শাহের যুক্তি, এর ফলে রাজনীতিতে কালো টাকায় প্রায় ইতি টানা গিয়েছিল। সে কারণেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোট এর বিরোধিতা করছে। তারা আগের ব্যবস্থা চাইছিল। যেখানে কেউ রাজনৈতিক দলের জন্য ১,৫০০ টাকা চাঁদা দিলে দলীয় তহবিলে ১০০ টাকা জমা করে বাকিটা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হত। শাহের দাবি, বিজেপির ৩০৩ জন সাংসদ রয়েছেন। বিজেপি ১৭টি রাজ্যে সরকারে রয়েছে। ফলে বিজেপি বেশি চাঁদা পেয়েছে। তবে চাঁদা ইন্ডিয়া জোটের দলগুলিও পেয়েছে। ২০১৯-এ ভোট ঘোষণার পরে বিজেপি সিংহভাগ চাঁদা পেয়েছিল। তখন নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। ফলে সরকারি নীতি বদল করে কাউকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল না।