এই জেলেই খুন হন বিট্টু। —ফাইল চিত্র।
শিখ ধর্মগ্রন্থ অবমাননায় অভিযুক্ত মহিন্দর পাল বিট্টু জেলের মধ্যে খুন হয়েছেন। সেই ঘটনার পর দু’দিন কেটে গেলেও, এখনও থমথমে গোটা পঞ্জাব। রাজ্যের ফরিদকোট জেলায় কোটকাপুরা ডেরা সাচা সওদা সংস্থার ধর্মীয় আলোচনা কেন্দ্রে মহিন্দর পাল বিট্টুর মরদেহ রাখা হয়েছে। সেখানে সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন ডেরা অনুগামীরা। রাজ্য সরকার তাঁদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত মৃতদেহ সৎকার করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
পঞ্জাব সরকারের কাছে ডেরা অনুগামীরা যে দাবিগুলি জানিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হল, শিখ ধর্মগ্রন্থ অবমাননা নিয়ে ডেরা অনুগামীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ তুলে নিতে হবে। জেলে পুরতে হবে আসল অপরাধীদের।
শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননার ঘটনায় ২০১৫ সালে জ্বলে উঠেছিল এই ফরিদপুর। বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়েছিল গোটা রাজ্যেই। মোগা জেলায় পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় দুই বিক্ষোভকারীর। কোটকাপুরেও বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। যে ঘটনা ঘিরে এই পরিস্থিতি দেখা দেয়, সেই ধর্মগ্রন্থ অবমাননায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন ফরিদকোটেরই বাসিন্দা মহিন্দর পাল বিট্টু। গত বছর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ দায়ের হয় আরও ২৫ জন ডেরা অনুগামীর বিরুদ্ধে। জেলে থাকা সেই থেকে জেলেই ছিলেন বিট্টু। শনিবার বিকালে সেখানে তাঁর উপর চড়াও হয় গুরুসেবক সিংহ ও মণীন্দ্র সিংহ নামের অন্য দুই বন্দি। লোহার রড দিয়ে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে ওই দু’জন। পাতিয়ালার নভ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: ভারতের আকাশে ঢোকেইনি পাক বায়ুসেনা, এয়ার মার্শাল ধানোয়ার মন্তব্যে বাড়ল ধন্দ
গোটা ঘটনায় রবিবারই গুরুসেবক সিংহ ও মণীন্দ্র সিংহকে চারদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে নভ-র একটি আদালত। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্ত কমিটি (সিট) গঠন করেছে পঞ্জাব সরকার। কিন্তু উত্তেজনা কমেনি তার পরেও। বরং ডেরা সমর্থক ও কট্টরপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে তেতে উঠেছে কোটকাপুরা। এক দিকে, খুনের মামলায় বিচারাধীন মণীন্দ্র সিংহ এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত গুরুসেবক সিংহের পক্ষ নিয়েছে কট্টরপন্থীরা। ওই দু’জনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে সংযুক্ত অকালি দলও (ইউএডি)। শিখ প্রথা মেনেই ‘পাপী’কে তারা শাস্তি দিয়েছে বলে দাবি করেছে ইউএডি। সেই সঙ্গে আসল অপরাধীদের শনাক্ত করতে না পারায় তৎকালীন এসএডি-বিজেপি সরকারকেও দুষেছে। আবার ডেরা সাচা সওদা প্রধান গুরমীত রাম রহিম সিংহ ইনসানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করায় আক্রমণ করেছে বর্তমান কংগ্রেস সরকারকেও।
এর পিছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন মহিন্দর পাল বিট্টুর ছেলে অমরেন্দ্র সিংহও। তিনি জানান, গ্রেফতার করে প্রথমে ফরিদকোট জেলে রাখা হয়েছিল বিট্টুকে। পরে নভ জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের লোকজন যাতায়াতের অসুবিধার কথা জানালে ফের সরিয়ে আনা হয় ফরিদকোট জেলে। কিন্তু গত বছর অক্টোবরে আবার নভ জেলেই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে বলেই আর আপত্তি করেননি তাঁরা।
আরও পড়ুন: ফের ধস তৃণমূলে, দঃ দিনাজপুর জেলা পরিষদের দখল নিল বিজেপি, গেলেন কালচিনির বিধায়কও
অন্য দিকে, অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে ইতিমধ্যেই কোটকাপুরার নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করেছে পঞ্জাব সরকার। পুলিশ বাহিনী এবং দুই কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী, এক কোম্পানি সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কম্যান্ডো ব্যাটেলিয়ন নামানো হয়েছে সেখানে। ইতিমধ্যেই বিট্টুর পরিবার এবং ডেরা সদস্যদের সঙ্গে একদফা আলোচনা সেরেছেন ডেপুটি কমিশনার সৌরভ রাজ, এসএসপি রাজবচন সিংহ সাধু। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌরভ রাজ। এই মুহূর্তে মৃতদেহের সৎকারই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।