তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিংহ মান (ডান দিক থেকে)। বুধবার তেলঙ্গানার যদাদ্রির লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরে। পিটিআই
মঞ্চে তিনি নিজে বাদে আরও তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যটা তেলঙ্গানা হলেও গান বাজছে হিন্দিতে, ‘এক দো তিন চার, দেশ কে নেতা কেসিআর’ কিংবা ‘ভাজপা কো হারায়েঙ্গে, ভারত কো বচায়েঙ্গে’। দলের নাম তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) থেকে পাল্টে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) করার পরে আজ প্রথম জনসভার মঞ্চ এ ভাবেই সাজালেন কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)। আর সেই মঞ্চ থেকেই তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন, ২০২৪ সালে ‘বিআরএস প্রস্তাবিত সরকার’ কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করলে সেনাবাহিনীর ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প বাতিল করা হবে। নিখরচায় বিদ্যুৎ পাবেন সারা দেশের কৃষকেরা। এলআইসি-র বিলগ্নিকরণের তীব্র বিরোধিতাও জারি থাকবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চলতি বছরে নিজের রাজ্যে বিধানসভা ভোটের দামামা বাজানো শুধু নয়, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে বিরোধী জোটের কান্ডারি তথা সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও এ দিন নিজের নাম হয়তো ভাসিয়ে দিলেন কেসিআর। বিকেলে খম্মমে সভার আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-এর আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরীওয়াল, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান এবং সমাজবাদী পার্টি (এসপি)-র প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবকে নিয়ে হায়দরাবাদের কাছে যদাদ্রির লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দিরে গিয়ে পুজো দেন তিনি। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের পলিটবুরোর সদস্য পিনারাই বিজয়ন এবং সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা শহরে পৌঁছে গেলেও মন্দিরে যাননি। তবে সকালের কেসিআরের প্রাতরাশ বৈঠক এবং বিকেলের সভায় ছিলেন সকলেই।
এই সভার দিকে নজর রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলও। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “বিজেপিকে সরাতে চায় সব বিরোধী দলই। সেই হিসেবে সব বিরোধী দলই সমমনস্ক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিরোধী শিবিরে দু’টি ভাগ রয়েছে। এক ভাগে রয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল, যারা রাজ্যে-রাজ্যে কংগ্রেসের জোট-শরিক। অন্য ভাগে রয়েছে বাকি দলগুলি, যাদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট নেই। তেলঙ্গানায় আজকের বিরোধী সম্মেলনটি ছিল এই দ্বিতীয় ভাগের।” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, আপ বা এসপির মতো দলগুলি সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের লড়াই রয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জোট হলেও এই রাজনৈতিক বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে হবে।
কেসিআর আজকের বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-কে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মেক ইন ইন্ডিয়া এখন জোক ইন ইন্ডিয়া (ভারতের রসিকতা)। প্রত্যেক গলিতে রয়েছে চিনা বাজার!’’ কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে কৃষকদের কল্যাণে তেলঙ্গানার ‘রায়তু বন্ধু’-র মতো প্রকল্প গোটা দেশে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, নদীর জল নিয়ে আন্তঃরাজ্য সমস্যার জন্য কেসিআর একই সঙ্গে দায়ী করেন বিজেপি এবং কংগ্রেসকে।
মোদীকে নিশানা করেন কেজরীওয়ালও। তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন যে, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা, দিল্লি, পঞ্জাবের মতো রাজ্যের রাজ্যপাল বা উপরাজ্যপালেরা সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীদের কাজে সমস্যার সৃষ্টি করছেন। কিন্তু আসলে মোদীই রাজ্যপালদের ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীদের কাজে বাধা দিতে বলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যদি ২৪ ঘণ্টা ভাবতে থাকেন, এর পরে তিনি কোন মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করবেন, তা হলে দেশের উন্নয়ন হবে কী করে?’’ বিরোধীদের নিশানা করতে প্রধানমন্ত্রী সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগাচ্ছেন এবং বিধায়ক কিনে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার ফেলায় ব্যস্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘দেশে এ বার একটা বদল দরকার। ২০২৪-এর নির্বাচন একটা সুযোগ।’’
অ-বিজেপি রাজ্যগুলিকে নিশানা করার কাজে রাজ্যপালদের ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন বিজয়নও। বলেন, ‘‘গণ-প্রতিরোধের মাটি খম্মমে এক নতুন প্রতিরোধ শুরু হোক। এই প্রতিরোধের লক্ষ্য— আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং সংবিধান তথা দেশকে রক্ষা করা।’’ সিপিআই শীর্ষ নেতা রাজা বলেন, ‘‘বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সমস্ত দলকে একসঙ্গে লড়তে হবে।’’
গত কালই বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মোদী বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আর ৪০০ দিন বাকি। তারই জের টেনে অখিলেশ আজ বলেন, ‘‘আর ৩৯৯ দিন পরে বিজেপি ক্ষমতা থেকে সরবে। ৪০০তম দিনে নতুন সরকার আসবে। এত বড় জমায়েত করে কেসিআর গোটা দেশকে বার্তা দিয়েছেন।... বিজেপিকে যদি তেলঙ্গানাতে থামানো যায়, তা হলে উত্তরপ্রদেশও খুব দূরে নয়।’’