তরুণ গগৈ— ফাইল চিত্র।
প্রয়াত হলেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। সোমবার বিকেলে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮৬। অসমের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রিত্বের রেকর্ড গগৈয়ের।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরে সেরে উঠলেও পরবর্তী উপসর্গ জনিত কারণে প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়কের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে। শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণে গত ২ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল গগৈকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। রবিবার রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর জানা যায়। এর পর থেকেই শুভানুধ্যায়ী এবং দলীর নেতা-কর্মীদের ভিড় জমেছিল হাসপাতালের সামনে।
গত ২৫ অগস্ট কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন গগৈ। প্রায় দু’মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর গত ২৫ অক্টোবর ছাড়া পান। কিন্তু গত ২ নভেম্বর ফের শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে তাঁকে ফের ভর্তি করাতে হয়। তাঁর বেশ কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছিল সোমবার সকালে।
আগামী এপ্রিল-মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই অসমের বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা গগৈয়ের অনুপস্থিতি উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম রাজ্যে কংগ্রেসকে কার্যত নেতৃত্বহীন করে দিল বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ।
তিতাবর কেন্দ্রের ৪ বারের বিধায়ক গগৈ ২০০১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত টানা ৩ দফা অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অসমে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হলেও নিজের আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। জোরহাট থেকে ৪ বার এবং কালিয়াবর কেন্দ্র থেকে ২ বার লোকসভার সাংসদও হয়েছেন।
আরও পড়ুন: গালভরা বক্তৃতায় চিনের মোকাবিলা অসম্ভব, ডোকলাম নিয়ে সরব রাহুল
অসমের আদি বাসিন্দা তাই-অহম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি তরুণের জন্ম ১৯৩৪ সালে, অসমের জোরহাট জেলায়। তাঁর বাবা ছিলেন স্থানীয় চা বাগানের চিকিৎসক। ছাত্রবস্থা থেকেই কংগ্রেস রাজনীতিতে ‘হাতেখড়ি’ গগৈয়ের। গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হওয়ার পরে ১৯৬৮ সালে প্রথম জোরহাট পুরসভার ভোটে লড়েছিলেন। সেই প্রথম নির্বাচনী জয়। ১৯৭১ সালের লোকসভা ভোটে জোরহাট কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে গগৈকে বেছে নেন ইন্দিরা গাঁধী। ১৯৮৫ পর্যন্ত ওই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন গগৈ। ১৯৯১ সালে কালিয়াবর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে নরসিংহ রাও সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন গগৈ।
আরও পড়ুন: ‘আপত্তিকর পোস্ট’ আইন আপাতত কার্যকর নয়, ঘোষণা বিজয়নের
১৯৯৬ সালে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার মৃত্যুর পরে কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে রাজ্য রাজনীতিতে ‘মনোনিবেশ’ করেছিলেন গগৈ। সে বছর ভোটে অসম গণ পরিষদের কাছে কংগ্রেস হারলেও ২০০১ সালে গগৈয়ের নেতৃত্বেই ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে বিজেপি-অগপ জোটের কাছে পরাস্ত হয় গগৈ সরকার।
গগৈয়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের নেতা-নেত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণে শোক জানিয়ে টুইট করেন শনিবার সন্ধ্যায়। তরুণের ছেলে গৌরব গগৈ কালিয়াবর থেকে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জয়ী হয়েছেন। গৌরব লোকসভায় কংগ্রেসের সহকারী দলনেতা। এআইসিসি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক ছিলেন গৌরব।