পিনারাই বিজয়ন। ফাইল চিত্র।
কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় কেরলের রাজনীতি। সোনা কেলেঙ্কারি নিয়ে চলতি বিতর্কে এ বার নতুন মোড় যোগ করল সৌর প্যানেল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তের পাল্টা দাবি!
দক্ষিণী ওই রাজ্যে সোনা পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত স্বপ্না সুরেশ সম্প্রতি দাবি করেছেন, ওই ঘটনায় লাভবান হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও তাঁর পরিবার। এর্নাকুলামের একটি আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন স্বপ্না। তাঁর ওই বয়ানের ভিত্তিতেই বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের ইস্তফা চেয়ে রাস্তায় নেমেছে কংগ্রেস তথা ইউডিএফ। তারই মধ্যে এ বার সৌর প্যানেল কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত সরিতা এস নায়ার দাবি করেছেন, একসঙ্গে তাঁরা যখন জেলে ছিলেন, সেই সময়ে স্বপ্নাই তাঁকে বলেছিলেন সোনা পাচার কেলেঙ্কারির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের কোনও সম্পর্ক নেই। অথচ এখন বাইরে বেরিয়ে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলছেন!
সোনা-কাণ্ডে অভিযুক্ত স্বপ্না এখন জামিনে মুক্ত। সৌর প্যানেল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সরিতাও জেল ঘুরে এসেছেন। যদিও ওই দুর্নীতির মামলায় চূড়ান্ত রায় এখনও হয়নি। কেরলে বিজয়নের নেতৃত্বে এলডিএফ সরকার আসার আগে উম্মেন চান্ডির নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ সরকার থাকাকালীন সৌর প্যানেল কেলেঙ্কারির অভিযোগ এসেছিল। সোনা-কাণ্ডে কংগ্রেস যেমন বিজয়নের ইস্তফার দাবিতে পথে, সৌর প্যানেল কেলেঙ্কারিতে চান্ডির পদত্যাগ চেয়ে তেমনই সেই সময়ে রাস্তায় নেমেছিল বামেরা। তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য সরকারের সচিবালয়ের সামনে লাগাতার ধর্না হয়েছিল, বিধানসভায় শাসক ও বিরোধী জোটের মারামারি পর্যন্ত হয়েছিল। পুরনো কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সরিতাই এখন সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারিতে অন্য এক অভিযুক্তের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সরিতার বক্তব্য, ‘‘একটা সময়ে আমরা একসঙ্গেই জেলে ছিলাম। সেই সময়ে স্বপ্নার সঙ্গে বেশ কিছু কথা হয়েছিল। বারেবারেই স্বপ্না তখন বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের সঙ্গে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ভাবে সোনা পাচারের ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর নাম বলে দিলে জামিন পেতে তাঁর সুবিধা হবে, এই কথাও বলতেন স্বপ্না।’’ সরিতার দাবি, ‘‘এখন স্বপ্না মুখ্যমন্ত্রীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন! ওঁর কথার তথ্য-প্রমাণ থাকলে আগে বলেননি কেন?’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এর্নাকুলামে দায়রা আদালতের কাছে স্বপ্নার জবানবন্দির প্রতিলিপি দেখতে চেয়ে আবেদনও করেছিলেন সরিতা। আদালত অবশ্য জানিয়েছে, সোনা-কাণ্ডে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। স্বপ্নার বয়ানের প্রতিলিপি এখন একমাত্র তদন্তকারী সংস্থাকেই দেওয়া যেতে পারে। তদন্ত শেষ হয়ে গেলে তখন অন্য কেউ পেতে পারেন। তদন্তকারীদের একটি দলকে সরিতা এমন অভিযোগও করেছেন যে, স্বপ্নাকে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ানোর নেপথ্যে প্রাক্তন বিধায়ক পি সি জর্জের (সম্প্রতি ঘৃণা ভাষণের দায়ে যিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন) ভূমিকা থাকতে পারে। অন্য দিকে, স্বপ্নাকে ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে ইডি।
সরাসরি সরিতার দাবির প্রসঙ্গে না গিয়েও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের বক্তব্য, ‘‘আমরা বারেবারেই বলছি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে জড়িয়ে এ সব প্রচার করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত ভার রাজ্য সরকারই তো স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে।’’ ইউডিএফের আহ্বায়ক এম এম হাসানের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘জেল থেকে বেরিয়ে এক জন বয়ান দিয়েছে, তাকে অবিশ্বাস করা হবে কেন? মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে জড়িয়ে স্বপ্না অভিযোগ করেছেন। সেগুলো যদি অসত্য হয়, মুখ্যমন্ত্রী কেন আইনি পদক্ষেপ করছেন না? মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বপ্নার দাবি অসত্য প্রমাণিত হলে তাঁকে তো আবার জেল খাটতে হবে!’’ হাই কোর্টের বিচারপতির তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় সংস্থা যাতে স্বপ্নার অভিযোগের তদন্ত করে, সেই দাবিতে আগামী ২ জুলাই সচিবালয় অভিযানের ডাক দিয়েছে ইউডিএফ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।