শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে।—ফাইল চিত্র।
কাকার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু কাকিমার কথা ফেলতে পারলেন না অজিত পওয়ার। বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করলেন। একইসঙ্গে এনসিপি-তে শরদ পওয়ারের উত্তরসূরির লড়াইয়ে খুড়তুতো বোনের কাছে লড়াইয়ে হেরে বসলেন।
আজ বিকেলে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট যখন মহারাষ্ট্রে গদি দখল নিশ্চিত করে ফেলেছে, সেই সময়ে এনসিপি-র অন্দরেও দীর্ঘ দিনের বিবাদের ফয়সালা হয়ে গেল। শরদ পওয়ারের উত্তরসূরি কে— সেই লড়াইয়ে দাদা অজিতকে হটিয়ে নিজের জায়গা পাকা করে ফেললেন শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। এনসিপি শিবিরের খবর, আজ শরদের স্ত্রী প্রতিভার কথা ফেলতে না পেরেই অজিত উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পরেই রাতে শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন অজিত। সেখানে সুপ্রিয়া সুলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
আজ সকালে সুপ্রিম কোর্ট বুধবারের মধ্যে দেবেন্দ্রকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেওয়ার পরেই এনসিপি-শিবির থেকে অজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সূত্রের খবর, অজিতের ‘ঘর ওয়াপসি’-র পিছনে প্রধান ভূমিকা নেন তাঁর কাকিমা, শরদের স্ত্রী প্রতিভা। প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার সদানন্দ শিন্দের কন্যা প্রতিভা কোনও দিনই রাজনীতিতে সক্রিয় নন। কিন্তু পওয়ার পরিবারের চাবিকাঠি তাঁরই হাতে। সূত্রের খবর, অজিতকে বিজেপির সঙ্গ ছাড়তে বলেন প্রতিভা। সে কথা ফেলতে না পেরে ইস্তফা দেন অজিত। দেবেন্দ্র ফডণবীস জানান, অজিত পওয়ার তাঁকে জানিয়েছেন, তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করছেন। নিজের ইস্তফার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফডণবীস বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে অজিত পওয়ার আমাকে জানান, তিনি আর জোটে নেই, পদত্যাগ করছেন। ওঁর পদত্যাগের ফলে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না।’’
অজিত যখন বিদ্রোহের পথ নিয়েছেন, সেই সময়ে সুপ্রিয়া তাঁকে সরাসরি আক্রমণের বদলে পারিবারিক সম্পর্কে জোর দেন। অজিত উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে সুপ্রিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘ক্ষমতা আসে-যায়, সম্পর্ক থেকে যায়।’ তুতো দাদার ‘প্রতারণা’ নিয়ে সুপ্রিয়া বলেছিলেন, ‘জীবনে কাকে বিশ্বাস করবেন! এত প্রতারিত কখনও মনে হয়নি। ওঁকে ভালবেসেছি, রক্ষা করেছি। বিনিময়ে কী পেলাম!’ এনসিপি-র এক নেতা বলেন, ‘‘অজিত দাদা যেখানে তাড়াহুড়ো করেছেন, সেখানেই পরিণতিবোধ দেখিয়েছেন সুপ্রিয়া। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, সুপ্রিয়াই দল ও পরিবার ধরে রাখতে পারবেন।’’
কাকার বিরুদ্ধে ভাইপোর বিদ্রোহ অবশ্য নতুন নয়। আগেও একাধিক বার দলীয় বৈঠকে শরদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অজিত। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তার পিছনে ছিল, শরদরাওয়ের পরে এনসিপি-র গদি নিয়ে সুপ্রিয়ার সঙ্গে লড়াই। শরদ বলেছেন, তাঁর সাংসদ-কন্যা সুপ্রিয়া মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আগ্রহী নয়। কিন্তু অজিত তাতে নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। এ বারের লোকসভা ভোটে অজিতের ছেলে পার্থ হেরে যান। অজিতের ক্ষোভ ছিল, এনসিপি-ক্যাডাররা তাঁর ছেলের জন্য সে ভাবে প্রচারে নামেনি। আর তাঁর মন্ত্রিত্বে মহারাষ্ট্রের সেচ দফতরে ৭০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্তও অজিতের গলায় ফাঁস হয়ে উঠছিল। এনসিপি-নেতাদের মতে, এক দিকে ক্ষমতার লোভ, অন্য দিকে দুর্নীতির তদন্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টাতেই বিজেপির হাত ধরেছিলেন অজিত। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। সরকার ও দল, সব খোয়ালেন তিনি।