আইনের অপব্যবহার প্রসঙ্গে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত আইন। এই মর্মে আইনের অপব্যবহার নিয়ে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ৪৯৮ (এ) ধারার মূল লক্ষ্য স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নিষ্ঠুরতা থেকে মহিলাদের সুরক্ষিত রাখা। কিন্তু গত কয়েক বছরে দাম্পত্যকলহের মামলা দেশ জুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে এই ধারার অপব্যবহারের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের মতে, অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ মেটানোর অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে আইনের এই ধারাকে।
বৈবাহিক সম্পর্কে মহিলাদের সুরক্ষা দিতে এই আইন তৈরি হয়েছে। ‘ব্যক্তিগত আক্রোশ’ মেটাতে এটিকে ব্যবহার করা যায় না। মঙ্গলবার এক মামলার শুনানিতে এ কথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনও প্রমাণ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যায় না।
মামলাটি এর আগে তেলঙ্গানা হাই কোর্টে বিচারাধীন ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান স্বামী। এর পরেই স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আচরণের পাল্টা অভিযোগ জানান মহিলা। স্ত্রীর দায়ের করা মামলা খারিজ করতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামী। কিন্তু মামলা খারিজ করেনি হাই কোর্ট। এর পর তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। মঙ্গলবার বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহের বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করে দিয়েছে।
ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৮৬ ধারায় এবং সাবেক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ (এ) ধারায় শ্বশুরবাড়িতে বিবাহিত মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইনের এই ধারায় অভিযুক্তেরা দোষী সাব্যস্ত হলে, তাঁদের তিন বছর বা তার বেশি সময়ের জেল হতে পারে। সঙ্গে জরিমানাও করা হতে পারে।
ঘটনাচক্রে সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণ যে সময়ে এসেছে, তখন বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত এক তরুণের আত্মহত্যা নিয়ে শোরগোল পড়েছে দেশে। সম্প্রতি দাম্পত্যকলহের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের এক পারিবারিক আদালত। এর পরে তরুণের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে পাওয়া যায় ২৪ পাতার একটি সুইসাইড নোট। একটি প্ল্যাকার্ডও উদ্ধার হয়েছে। তাতে লেখা ছিল, “বিচার এখনও বাকি”। তরুণের পরিবারের অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।