Supreme Court of India

উপাসনাস্থল আইন খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট

১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে বলা হয়েছে, কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৬:৫১
Share:

১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট।

অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণ শুরু হওয়ার পরে আদালতে দাবি উঠেছে, এ বার মথুরায় শাহি ইদগাহ মসজিদ ও বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ সরানো হোক। কিন্তু তাতে প্রধান বাধা ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন। যাতে বলা হয়েছে, কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। এ বার সেই আইনি বাধা খতিয়ে দেখতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

উপাসনাস্থল আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। আজ প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজি হয়েছেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে শীর্ষ আদালত।

কাশী-মথুরার মসজিদ সরানোর দাবিতে এত দিন যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের এই অবস্থানে স্বভাবতই তাঁরা উল্লসিত। মথুরার মসজিদ সরানোর দাবি জানিয়ে মামলাকারী আইনজীবী, ‘হিন্দু ফ্রন্ট ফর জাস্টিস’-এর মুখপাত্র বিষ্ণুশঙ্কর জৈন বলেন, ‘‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ।’’ রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, অযোধ্যার বাবরি মসজিদের পরে এ বার কি বিজেপি-আরএসএস কাশী-মথুরা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু করতে চাইছে?

Advertisement

রামমন্দির-বাবরি মসজিদ নিয়ে আইনি বিবাদের সময়ই ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন তৈরি হয়। তাতে উপাসনাস্থলের চরিত্র বদলে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে এটা-ও বলা হয়েছিল, এ নিয়ে কোনও মামলা করা যাবে না। অযোধ্যার বিবাদই একমাত্র ব্যতিক্রম থাকবে। এই আইনি যুক্তিতেই প্রাথমিক ভাবে মথুরার মসজিদ সরানোর দাবিকে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের নামে যে মামলা হয়েছিল, মথুরার দেওয়ানি আদালত তা খারিজ করে দেয়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ বেআইনি ভাবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে জমি দখল করে রেখেছে বলে পরে আবার জেলা আদালতে মামলা হয়েছে। একই ভাবে বারাণসীর আদালতে মামলা হয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়েও।
সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী উপাধ্যায়ের যুক্তি, উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন বৈষম্যমূলক। এর ফলে হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ, তাঁদের মন্দিরে মুসলিম শাসকদের আমলে হামলা হয়েছে। সেগুলি মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে ফের পুজোর অধিকারের দাবিতে তাঁদের মামলা করারও অধিকার নেই।

প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিলেও ওই রায়ে ১৯৯১ সালের উপাস্থনাস্থল আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। সে সময় শীর্ষ আদালত বলেছিল, অতীতে কোথায় কী ছিল, তা ভেবে ফের মন্দির-মসজিদের চরিত্র বদল না করাটা ধর্মনিরপেক্ষতার মূলমন্ত্র। সে কারণে এই আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাশী-মথুরায় মসজিদ সরানোর দাবিতে সরব সংগঠন ও তাদের আইনজীবীদের যুক্তি, এই আইনের ফলে হিন্দুদের ধর্মস্থল অন্য সম্প্রদায় ক্ষমতার জোরে দখল করে থাকলেও কোনও সুরাহা মিলছে না। এখনই এই বিতর্কে ঢুকতে নারাজ কংগ্রেস ও বিরোধী নেতাদের মতে, সঙ্ঘ পরিবার আরও একবার মন্দির-মসজিদ বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলতে চাইছে। যাতে আমজনতার দৈনন্দিন সমস্যা থেকে নজর ঘুরে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement