—ফাইল চিত্র।
ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন আদৌ বৈধ কি না, খতিয়ে দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ রুখতে আইন কার্যকর করা ৩ রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশের কাছে তা নিয়ে ব্যাখ্যাও চাইল শীর্ষ আদালত। নোটিস ধরানো হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকেও। ৪ সপ্তাহ পর বিষয়টি নিয়ে ফের শুনানি হবে।
দেশের সংবিধানে যেখানে ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমানাধিকার এবং বৈষম্যহীনতার কথা বলা রয়েছে, সেখানে এই ধরনের আইন কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছিল আদালতে। এর মধ্য অন্যতম হল আইনজীবী বিশাল ঠাকরে এবং তিস্তা শেতলওয়াড়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’। তার ভিত্তিতেই বুধবার এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় সর্বোচ্চ আদালত।
আইনটি কার্যকর করার উপর যদিও এখনই স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে ওই ৩ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে নোটিসের জবাব পেলে বিষয়টি নিয়ে শুনানি করবে প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও পড়ুন: ফের উত্তরপ্রদেশ, যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে পাঁজর ভেঙে খুন গণধর্ষিতাকে
ভিন্ ধর্মে বিয়ে রুখতে দীর্ঘ দিন ধরেই ‘লভ জিহাদ’-এর তত্ত্ব তুলে ধরছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। মূলত হিন্দু ঘরের মেয়েদের মুসলিম ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে হওয়াতেই আপত্তি তাদের। তাদের দাবি, ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যেই হিন্দু মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেন মুসলিম যুবকরা। তবে মুসলিম মেয়েদের হিন্দু ঘরে বিয়েকে এর আওতায় ফেলতে নারাজ তারা।
দীর্ঘ দিন ধরে এই ‘লভ জিহাদ’ বিরোধী আইনের সপক্ষে সওয়াল করার পর গত বছর নভেম্বরে অর্ডিন্যান্স জারি করে সেটিকে আইনে পরিণত করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সর্বোচ্চ সাজা নির্ধারিত হয় ১০ বছরের জেলের। এমনকি বিয়ের দু’মাস আগে সরকারকে নোটিস না দিলে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে বলেও জানানো হয়।
আইনটি পাশ হওয়ার পর থেকে ওই রাজ্যে বহু ভিন্নধর্মী যুগল এবং দম্পতিকে হেনস্থা, তাঁদের উপর নির্যাতন চালানো, এমনকি ভুয়ো অভিযোগে মুসলিম যুবকদের জেলবন্দি করে রাখার ঘটনাও সামনে এসেছে। তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশকে সম্প্রতি ঘৃণার রাজনীতি, বিভাজন এবং ধর্মান্ধতার কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেন দেশের শতাধিক প্রাক্তন আইএএস অফিসার। যোগীকে চিঠিও দেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখী নাট্যে যবনিকা চেয়ে দৌত্য বিজেপি-র, প্রথমাঙ্ক সমাপ্ত ডাল-ভাতে
কিন্তু তার পরেও ‘লভ জিহাদ’-এর অজুহাতে নৃশংসতার ঘটনা রোখা যায়নি। বরং উত্তরপ্রদেশের দেখাদেখি হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও ‘লভ জিহাদ’ আইন কার্যকর করার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ডে দু’বছর আগে বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন পাশ হলেও, সম্প্রতি সেই আইনের দোহাই দিয়ে একাধিক মানুষকে হেনস্থা করার ঘটনা সামনে আসে।
এমনকি বাদ যায়নি হিমাচল প্রদেশও। খ্রিস্টান মিশনারিজদের হাতে ব্যাপক ধর্মান্তরণের ঘটনা রুখতে ২০০৬ সালে হিমাচলের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইন পাশ করে। ২০১৭ সালে সেখানে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তার পর ২০১৯ সালে জয়রাম ঠাকুরের সরকার তাতে বেশ কিছু সংশোধন ঘটিয়ে আইনটিকে আরও কঠোর করে তোলে। বিরোধী কংগ্রেসের সমর্থনেই সেটি রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়ে যায়। তার পর এত দিন সেটি পড়ে থাকার পর, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেটি কার্যকর হয়।