অসহায়। থেকে গিয়েছে পুরনো নোট। মরিয়া হয়ে তখন এমনকী আত্মহত্যার হুমকি। এখন জমার দরজা ফের খুলবে? ফাইল চিত্র।
কথা দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। ৩১ মার্চ (২০১৭) পর্যন্ত বাতিল পুরনো নোট বদলে দেওয়ার। কিন্তু এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে সেই সুযোগ বন্ধ হয় হঠাৎই। বিপাকে পড়েন বহু সাধারণ মানুষ। তাঁদের স্বার্থেই বাতিল পুরনো নোট জমার দরজা ফের এক বার খোলা যায় কি না, কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলল, এ ভাবে বিনা কারণে নিজের টাকা থেকে বঞ্চিত করা নিয়ে।
ফলে ‘সময়ে’ ব্যাঙ্কে জমা দিতে না-পারার কারণে কারও আলমারিতে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট এখনও থেকে থাকলে, তা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার কিছুটা হলেও সম্ভাবনা তৈরি হল এর দৌলতে।
মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের যুক্তি, ‘‘যদি কারও প্রকৃত সমস্যা থেকে থাকে, তাঁকে নোট জমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আপনারা কারও অর্থ কেড়ে নিতে পারেন না। এটা যে আমার টাকা, তা প্রমাণ করতে পারলে সেই অর্থ থেকে কেউ আমাকে বঞ্চিত করতে পারে না।’’
কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার জানান, এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান দু’সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে জানানো হবে। কিন্তু যাঁদের কাছে পুরনো নোট রয়ে গিয়েছে, তাঁদের সবাই তেমন সুযোগ পাবেন, এমন প্রতিশ্রুতি তিনি দেননি। বরং বলেছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক হয়তো প্রত্যেকের বিষয়টি আলাদা-আলাদা ভাবে শুনতে পারে।’’
নরেন্দ্র মোদী, ৮ নভেম্বর, ২০১৬ (নোট বাতিলের দিন )
কোনও কারণে ৩০ ডিসেম্বরের (২০১৬) মধ্যে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট (ব্যাঙ্কে) জমা দিতে না-পারলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কিছু অফিসে সেই সুবিধা মিলবে
৩১ মার্চ পর্যন্ত।
নোট বদলের সুবিধা জারি থাকছে শুধু সেই সব ভারতীয় নাগরিক ও অনাবাসী ভারতীয়ের জন্য, যাঁরা ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর দেশে ছিলেন না। সুযোগ পাবেন দুর্গম অঞ্চলে নিযুক্ত জওয়ানরাও।
আবার অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের প্রশ্ন, নোট বাতিলের পরে কেন্দ্র আইন করে বলেছে যে, ১০টির বেশি বাতিল পুরনো নোট রাখা বেআইনি। ধরা পড়লে জরিমানা। তা হলে এখন সেই ‘বেআইনি নোট’ ফেরানো হবে কী করে? আগেও সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র জানিয়েছিল, নতুন করে ওই সুযোগ দিতে তারা আইনত বাধ্য নয়। এ দিন অবশ্য শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছে।
নোট বাতিলের জেরে নানা সমস্যা নিয়ে একগুচ্ছ আর্জি জমা পড়েছিল বিভিন্ন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে। তা ছাড়া, নোট নাকচের সময়ে নিত্যনতুন ঘোষণা করা আর দু’দিন না-যেতেই তা পাল্টে ফেলা নিয়েও আগে শীর্ষ আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রকে। রাতারাতি নোট জমার সুযোগ বন্ধ হওয়া যার অন্যতম।
এ বছরের প্রথম কাজের দিনে ঘরে রয়ে যাওয়া বাতিল নোট আঁকড়ে যাঁরা রিজার্ভ ব্যাঙ্কমুখো হয়েছিলেন, তাঁদের মাথায় হাত পড়েছিল। তাজ্জব বনে দেখতে হয়েছিল, খোদ প্রধানমন্ত্রী কথা দেওয়া সত্ত্বেও পুরনো নোট পাল্টানোর দরজা মুখের উপর বন্ধ করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক! মুশকিলে পড়েন সকলে।
এ দিন প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, তখন মরণাপন্ন ছিলেন বলে সরকার কারও আয়ের টাকা কেড়ে নিতে পারে কি? ১৮ জুলাই ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা।