যোগগুরু রামদেব। — ফাইল চিত্র।
পতঞ্জলি মামলায় আজও চূড়ান্ত রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট। গ্রীষ্মাবকাশের পরে ৯ জুলাই ফের শুনানি হবে। তার মধ্যে পতঞ্জলিকে জানাতে হবে, বিতর্কিত ওষুধের কত স্টক তাদের কাছে রয়েছে। তবে নতুন নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাবা রামদেব এবং সংস্থার সিইও বালকৃষ্ণকে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিতে হবে না। আইএমএ প্রধান অবশ্য এই নিয়ে টানা তিন বার তিরস্কৃত হলেন। বিতর্কিত সাক্ষাৎকারে আদালতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্যের দায়ে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনা সন্তুষ্ট করেনি সুপ্রিম কোর্টকে।
পতঞ্জলির ব্যাপারে আজ বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমানুল্লার বেঞ্চ বলেছে, জনসাধারণের উপরে বাবা রামদেবের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে এবং তাঁর উচিত সেটাকে সঠিক অভিমুখে ব্যবহার করা। পতঞ্জলির আইনজীবী বলবীর সিংহ এ দিন আদালতকে জানান, পতঞ্জলি কোভিডের ওই বিতর্কিত ‘ওষুধ’ বিক্রি করা বন্ধ করেছে এবং যে সব টিভি চ্যানেলে এখনও তার বিজ্ঞাপন চলছে, তাদের চিঠি লিখে সেগুলো বন্ধ করতে বলেছে। কত ওষুধ স্টকে রয়েছে, সেটা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেছে আদালত। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এর পরে উল্লেখ করেন, রামদেব যোগ নিয়ে অনেক ভাল কাজ করেছেন। তা উত্তরে বিচারপতি কোহলি বলেন, ‘‘যোগ নিয়ে নিশ্চয় ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু পতঞ্জলির পণ্য সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।’’
ঘটনাচক্রে সংবাদমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারের জেরে পতঞ্জলির বিরুদ্ধে মামলাকারী ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) নিজেও সুপ্রিম কোর্টের কোপে পড়েছে। আইএমএ প্রেসিডেন্ট আরভি অশোকান পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আদালতের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। এই নিয়ে টানা তিন সপ্তাহ সুপ্রিম কোর্টে তার জন্য তিরস্কৃত হতে হচ্ছে তাঁকে। অশোকান অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী গত সপ্তাহে দাবি করেছিলেন, প্রশ্নের ফাঁদে পড়ে বেফাঁস কথা বলেছেন অশোকান। এ দিনও তিনি আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু বিচারপতিদের প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের বিরুদ্ধে যখন কেউ কথা বলে, আপনারা আদালতে ছুটে আসেন। কিন্তু সেই আপনারাই যখন আদালতের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন, সেটা কেমন হয়? যা মনে এল তাই বলে ফেলা যায় কি? আপনার কাছে অনেক বেশি দায়িত্বশীলতার প্রত্যাশা ছিল।’’
অশোকান যে হলফনামা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, তাতেও খুশি নয় কোর্ট। বিচারপতিদের প্রশ্ন, ‘‘আপনার কথায় আদালতের যে সম্মানহানি হল, তা নিরাময়ের জন্য আপনি কী করেছেন? আপনি কি প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন?’’ বিচারপতি কোহলি বলেন, ‘‘আমরা সবার আগে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু কিছু কিছু সময় আত্মনিয়ন্ত্রণেরও প্রয়োজন আছে।’’ বিচারপতি আমানুল্লা বলেন, ‘‘বিচারপতিদের যে পরিমাণ নিন্দা শুনতে হয়, সব কিছুতেই তাঁরা প্রতিক্রিয়া জানান না। পদক্ষেপ করার অধিকার থাকলেও খুব অল্প ক্ষেত্রেই পদক্ষেপ করেন।’’ কেন? বিচারপতিদের ব্যাখ্যা, ‘‘দায়িত্বশীলতা থেকেই এই কাণ্ডজ্ঞান আসে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কাউচে বসে যা খুশি বলে দেবেন! আপনি যা বলেছেন, সেটাই যদি কেউ আপনার বিরুদ্ধে বলত, আপনি কোর্টে ছুটে আসতেন।’’