সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিয়ন্ত সিংহ খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত বলবন্ত সিংহ রাজোয়ানা। ছবি: সংগৃহীত।
পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকারীর ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। যদিও বুধবার শীর্ষ আদালতের ৩ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, বিয়ন্ত খুনে দোষী সাব্যস্ত বলবন্ত সিংহ রাজোয়ানার ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।
বুধবার এই রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গবই, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সঞ্জয় করোলের বেঞ্চ। দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর ক্ষমাপ্রার্থনার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে ফাঁসির সাজা কমানোর আবেদন করেছিলেন বলবন্ত। তবে বুধবারের রায়ে ফাঁসির সাজা কমানো না হলেও তার ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন নিয়ে কেন্দ্রের কোর্টেই বল ঠেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘বলবন্তের ক্ষমাপ্রার্থনার আবেদন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অবস্থান লক্ষ করেছি। ক্ষমাপ্রার্থনা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
বিয়ন্ত খুনের দায়ে ২৬ বছর ধরে জেলবন্দি রয়েছেন বলবন্ত। নব্বইয়ের দশকে শিখ জঙ্গি সংগঠন বব্বর খালসার হামলায় নিহত হন পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংহ। ১৯৯৫ সালের ৩১ অগস্ট চণ্ডীগড়ের সচিবালয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ বিয়ন্ত-সহ মোট ১৭ জন নিহত হয়েছিলেন। কোমরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান ওই সংগঠনের সদস্য দিলবর সিংহ বব্বর। তবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান তাঁর সহযোগী তথা অপর আত্মঘাতী জঙ্গি বলবন্ত। ওই ঘটনার আগে প়ঞ্জাব পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। বিয়ন্ত খুনের মামলায় বিশেষ সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত বলবন্তকে ২০০৭ সালের জুলাইয়ে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছিল। তবে ২০১৪ সালে তাঁর হয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করে শিখ সংগঠন শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি)। এর পর ২০১৯ সালে বলবন্তের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাবাসের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ওই বছর গুরু নানকের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকীর আগে ‘মানবিকতার খাতিরে’ই এমন করা হয়েছিল বলে দাবি ছিল কেন্দ্রের। যদিও সে সময় বিরোধীদের দাবি ছিল, বলবন্তের ফাঁসির সাজা কমানোর জন্য এনডিএ-তে বিজেপির শরিক শিরোমণি অকালি দলের তরফে নরেন্দ্র মোদী সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও ওই সিদ্ধান্তের পরেও বাস্তবে বলবন্তের ফাঁসির সাজা কমানোর বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।
২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বলবন্ত। তাঁর আবেদন ছিল, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া সত্ত্বেও সাজা কমানো হয়নি। যদিও কেন্দ্রের দাবি ছিল, এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বলবন্তের সাজা কমানোর জন্য তাঁর হয়ে শীর্ষ আদালতের সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি এবং অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কেএম নটরাজ। শুনানির পর ২ মার্চ নিজেদের রায় সংরক্ষিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত।