প্রতীকী ছবি।
হুমকির ভয়ে খুনের মামলায় বিচারের দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের এক বিচারক। সেই ঘটনার পরও খুনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি? মধ্যপ্রদেশ পুলিশের কাছে তার জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট। এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রীতিমতো ভর্ৎসনার সুরে আদালত জানতে চাইল, খুনের ঘটনার পর অভিযুক্ত টানা দু’বছর গ্রেফতারি এড়ালেন কী ভাবে। বিচারককে শাসানোর সাহসই বা পেলেন কী করে? মধ্যপ্রদেশ পুলিশকে অবিলম্বে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়ে আদালত জানিয়েছে, আগামী ২৬ মার্চ এই মামলাটির ফের শুনানি হবে।
মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা দেবেন্দ্র চৌরাসিয়ার হত্যা সংক্রান্ত মামলা নিয়েই এই বিতর্ক। দু’বছর আগের এই মামলা বিচার চলছিল মধ্যপ্রদেশের দামোর অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি সোনকরের এজলাসে। মূল অভিযুক্ত গোবিন্দ সিংহ ঠাকুর মধ্যপ্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি বিধায়ক রম্বাই সিংহের স্বামী। অভিযোগ, দেবেন্দ্র খুনে অভিযুক্ত গোবিন্দকে গ্রেফতার করা তো দূর, বরং তাঁর হয়েই মধ্যপ্রদেশের পুলিশ এই মামলায় চাপ দিতে শুরু করে বিচারক আরপি সোনকরকে। পুলিশের চাপে বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াতে চান দামোর অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সোনকর। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন তিনি। বলেন, যে কোনও মুহূর্তে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এমনকি তাঁকে গুরুতর কোনও দুর্নীতিতে ফাঁসানোর চক্রান্ত চলছে বলেও অভিযোগ করেন সোনকর।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি এমআর শাহের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারককে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। সোনকর নিজের অভিযোগে বলেছিলেন, দামোর পুলিশ সুপার হেনস্তা করছেন তাঁকে। অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের সেই অভিযোগ মধ্যপ্রদেশের ডিজিপিকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বেঞ্চ জানতে চেয়েছে, ‘‘দেবেন্দ্র হত্যায় জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল গোবিন্দের বিরুদ্ধে। তারপরও কী ভাবে গ্রেফতারি এড়াল অভিযুক্ত!’’ এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আইন যথাযথভাবে বলবৎ করতে হবে।’’
মধ্যপ্রদেশের বিধায়কের স্বামী গোবিন্দকে ‘রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেছিলেন দামোর ওই বিচারক। তিনি বলেছিলেন, পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। শুক্রবার সোনকরের সেই অভিযোগ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ওই বিচারক এই মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার ব্যাপারে ভীতি প্রকাশ করেছেন। তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। একজন বিচারকে অবিশ্বাস করার কোনও কারণ দেখছি না আমরা।’’
শুক্রবার দেবেন্দ্রর হত্যা সংক্রান্ত ওই কংগ্রেস নেতার পুত্রের একটি মামলার শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে।