সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরে নীতীশের (ইনসেটে) মা নীলম কাটারা। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
ফের শিরোনামে নীতীশ কাটারা হত্যা মামলা। চোদ্দো বছর আগের সেই হাই প্রোফাইল হত্যা মামলায় আজ অভিযুক্তদের কিছুটা হলেও সাজা কমেছে। তবু শীর্ষ আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট নিহত নীতীশের মা।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল এই মামলায় তিন সাজাপ্রাপ্ত। বিকাশ যাদব, বিশাল যাদব এবং তাদের সহযোগী সুখদেব পহেলওয়ান। আজ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়ে জানিয়েছে, বিকাশ এবং বিশালকে ২৫ বছর জেলে কাটাতে হবে। সুখদেবের ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ ২০ বছর।
২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে খুন হয়েছিলেন দিল্লির যুবক নীতীশ কাটারা। বিকাশের বোন ভারতীর সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল নীতীশের। সেই সম্পর্কে আপত্তি ছিল ভারতীর বাড়ির লোকজনের। ফেব্রুয়ারির মাঝে প্রথমে অপহৃত হন নীতীশ। পরে তাঁকে খুন করে তাঁর দেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল ভারতীর দুই দাদা, বিকাশ ও বিশাল যাদব এবং তাদের সহযোগী সুখদেব। ২০০৮-এ দিল্লির এক নিম্ন আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে যাদব ভাইদের। ২০১৪ সালে নিম্ন আদালতের রায়ই বজায় রাখে দিল্লি হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছিল, ‘‘পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে খুন করা হয়েছে যুবকটিকে। সেই সঙ্গে কাজ করেছে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসাবোধ।’’
হাইকোর্ট ১৪ বছরের বদলে ২৫ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে বিকাশ ও বিশালকে। সেই সঙ্গে প্রমাণ লোপাটের জন্য আরও পাঁচ বছরের আলাদা সাজা। সুখদেবের ক্ষেত্রে সেই মেয়াদ ছিল যথাক্রমে কুড়ি আর পাঁচ বছর। এই মামলাকে বিরলতম আখ্যা দিয়েও নীতীশের খুনিদের ফাঁসি দেয়নি হাইকোর্ট। কারণ আদালতের বক্তব্য ছিল, দোষীদের সংশোধনের সুযোগ দিতে চায় আদালত।
হাইকোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় তিন সাজাপ্রাপ্ত। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি সি নাগাপ্পনের বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, মোট ২৫ বছর জেল খাটতে হবে যাদব ভাইদের। সুখদেবের ক্ষেত্রে মোট ২০ বছর। অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের জন্য আলাদা করে আর জেল খাটতে হবে না কাউকে।
পাঁচ বছর করে সাজার মেয়াদ কমলেও সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে খুশি নীতীশের মা নীলম কাটারা। ছেলের খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে দীর্ঘ চোদ্দো বছর লড়াই করছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি ওদের ফাঁসিই চেয়েছিলাম। প্রমাণ লোপাটের জন্য পাঁচ বছর শাস্তি কমেছে। ওরা যা নষ্ট করেছিল, তা কারও পায়ের চটি বা জুতোর অংশ ছিল না। আমার ছেলের দেহ ছিল ওটা। তার জন্য দশ বছর সাজা হলেও সেটা কম হতো। কিন্তু তবু আমি আজ খুশি। সুপ্রিম কোর্ট যে সম্মান রক্ষার্থে খুনের কথা মাথায় রেখে চোদ্দো বছর যাবজ্জীবনের বদলে দীর্ঘ পঁচিশ বছর সাজা দিয়েছে, তাতেই আমার যুদ্ধ জয় হয়ে গিয়েছে।’’