প্রতীকী ছবি।
শেষ হইয়াও হইল না শেষ!
রাফাল চুক্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার দাবি ফের খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছে। কিন্তু ওই বেঞ্চেরই বিচারপতি কে এম জোসেফ এই রায়ের সঙ্গে সহমত হয়েও ভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে পৃথক রায়ে বলেছেন, রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্ত করতে চাইলে কোনও বাধা নেই।
জোসেফের এই রায়কে হাতিয়ার করেই আজ কংগ্রেস চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, সাহস থাকলে কেন্দ্র সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিক। যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করে রাফাল চুক্তি খতিয়ে দেখা হোক। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, ‘‘আজকের সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের স্বচ্ছ, দুর্নীতি-মুক্ত ছবিতে ফের সিলমোহর দিল।’’
ঠিক ১১ মাস আগে, ২০১৮-র ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরে নতুন নথি প্রকাশ্যে আসে। তার ভিত্তিতে অভিযোগ ওঠে, রাফাল কেনা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে ফরাসি যুদ্ধবিমান সংস্থা
দাসো-র দর কষাকষির সময় প্রধানমন্ত্রীর দফতর সমান্তরাল দর কষাকষি চালাচ্ছিল।
আরও পড়ুন: তদন্তের দাবিতে অটলই রাহুল
এর পরেই বাজপেয়ী আমলের দুই মন্ত্রী অরুণ শৌরী, যশবন্ত সিনহা ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে আগের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান। তাঁদের দাবি ছিল, সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই-কে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত করার নির্দেশ দিক। কিন্তু প্রধান বিচারপতি গগৈ ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল তাঁদের রায়ে জানিয়েছেন, ‘এই মামলা পুনর্বিবেচনার আর্জির সারবত্তা নেই।’ তাঁদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হলেও বিচারপতি জোসেফ আলাদা রায়ে জানিয়েছেন, সিবিআই যদি দুর্নীতি দমন আইনের ১৭এ ধারায় আগাম অনুমতি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে চায়, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের রায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
কংগ্রেসের আট প্রশ্ন
• রাষ্ট্রায়ত্ত ‘হ্যাল’কে টপকে পছন্দের লোককে বরাত দেওয়া হল কেন
• ১২ দিন আগে তৈরি যে সংস্থা, তাকে ৩০,০০০ কোটি টাকার বরাত কেন
• প্রতি রাফালের দাম ৫২৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৬৭০ কোটি হল কী করে
• ১২৬ থেকে কমিয়ে ৩৬টি বিমান কিনে নিরাপত্তার সঙ্গে আপস কেন
• বিমান কেনার কথা ঘোষণার আগে কেন মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিলেন না প্রধানমন্ত্রী
• প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ কেন হাতছাড়া
• রাফালের ‘বেঞ্চমার্ক’ দাম কেন বাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী
• রাফাল ‘জরুরি’ হলে পেতে ৮ বছর দেরি কেন
আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, এ দিনের রায়ে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, শীর্ষ আদালত নিজে তদন্তের নির্দেশ দিল না। দুই, সিবিআই তদন্ত করতে চাইলে সমস্যা নেই বলেও জানিয়ে দিল।
যশবন্ত-শৌরীরা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের অধিকারের প্রসঙ্গ তুলে তার হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে কেউ নিজের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। প্রধান বিচারপতি গগৈ ও বিচারপতি কউল এই অনুচ্ছেদে আদালতের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে বলেছেন, অন্য পথ খোলা থাকলেও মামলাকারীরা তা নেননি।
প্রধান বিচারপতি গগৈ এবং বিচারপতি কউল তাঁদের রায়ে বলেছেন, এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিতে হলে প্রাথমিক ভাবে ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে বলে জানা বাধ্যতামূলক। এই মামলায় তার অভাব আছে। সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া, যুদ্ধবিমানের দাম ও দাসো-র ভারতীয় সংস্থাকে বাছাই করার বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
আরও পড়ুন: শবরী-দ্বন্দ্বে ভিন্ ধর্মের বৈষম্য
কিছু ব্যক্তির ধারণার ভিত্তিতে ‘ফিশিং অ্যান্ড রোভিং’ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া যায় না। কোনও তথ্য লুকোনো হয়নি। ভুল তথ্যও আদালতে পেশ
করা হয়নি।
রাফালের মূল চুক্তিটি হয়েছিল ইউপিএ আমলে। সে সময় ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ফ্রান্সের দাসো এভিয়েশন এবং ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান এরোনটিক্যাল লিমিটেড (হ্যাল)-এর সঙ্গে চুক্তি করেছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি সরকারে এসে সেই চুক্তি বাতিল করে। মোদী ফ্রান্সে গিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় ৩৬টি রাফাল কেনার ঘোষণা করেন। কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল, ইউপিএ সরকার যে রাফাল যুদ্ধবিমান এক একটি ৫২৬ কোটি টাকা দিয়ে কিনছিল, মোদী সরকার তা-ই ১৬০০ কোটি টাকা দিয়ে কিনছে। রাফাল-চুক্তিতে ছিল, দাসো চুক্তি-মূল্যের ৫০ শতাংশ মূল্যের প্রকল্প বা কাজের বরাত ‘অফসেট পার্টনার’ হিসেবে ভারতের কোনও সংস্থাকে দেবে। কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ-র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজের বরাত ‘হ্যাল’ পেত। কিন্তু মোদী সরকার তা অনিল অম্বানীর সংস্থাকে পাইয়ে দেয়।
রাফাল চুক্তির সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আজ তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় দেখিয়ে দিল, রাফালের দাম, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ও অফসেট নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’’