(বাঁ দিকে) অজিত পওয়ার এবং শরদ পওয়ার (ডান দিকে)। এনসিপিতে বিভাজনের পর ‘ঘড়ি’ প্রতীক নিয়ে চলছে মামলা। —ফাইল চিত্র।
সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র ‘ঘড়ি’ প্রতীক মামলায় অজিত পওয়ারের গোষ্ঠীকে শর্ত বেধে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ‘ঘড়ি’ প্রতীক সংক্রান্ত মামলা শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন এবং এই বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো এখনও বাকি— এই মর্মে একটি সতর্কীকরণ উল্লেখ থাকতে হবে নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।
বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভূয়ানের বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল। শীর্ষ আদালত আগেও এক বার জানিয়েছিল রাজনৈতিক কর্মসূচি বা প্রচারে ‘ঘড়ি’ প্রতীক ব্যবহার হলে, তার সঙ্গে সতর্কীকরণ উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু শরদ পওয়ার গোষ্ঠীর অভিযোগ, অজিত গোষ্ঠী কোনও সতর্কীকরণ ব্যবহার করছে না। তাদের হয়ে মামলাটি লড়ছেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি রয়েছে জেনে অজিত-গোষ্ঠী প্রতীকের সঙ্গে সতর্কীকরণ যুক্ত করতে শুরু করেছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানান শরদ-গোষ্ঠীর আইনজীবী।
কোনও একটি পক্ষ যাতে ‘ঘড়ি’ প্রতীক ব্যবহার করে বাড়তি সুবিধা না পায়, সেই বিষয়টি নিয়েও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সিঙ্ঘভি। তিনি বলেন, “অজিত-গোষ্ঠী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটি তারা মানছে না। দু’পক্ষের কাউকেই ‘ঘড়ি’ প্রতীক ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। অজিত গোষ্ঠীকেও অন্য কোনও প্রতীক ব্যবহার করতে বলা হোক।”
অজিত গোষ্ঠীর আইনজীবী বলবীর সিংহ অবশ্য সতর্কীকরণ ব্যবহার না করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। সিঙ্ঘভি মূল ছবিকে কেটে একটি অংশকে দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ বলবীরের। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, অজিত-গোষ্ঠীকে ‘ঘড়ি’ প্রতীক ব্যবহারের সময় অবশ্যই সতর্কীকরণ ব্যবহার করতে হবে। এই মর্মে নতুন করে আদালতে লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়েছে এনসিপি অজিত-গোষ্ঠীকে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এনসিপির ঘড়ি প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না শরদ গোষ্ঠী। তাদের জন্য নির্বাচন কমিশন নতুন প্রতীক বরাদ্দ করেছে। ‘তূর্য (শিঙা) বাদক ব্যক্তি’-র প্রতীক। অজিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শরদ। মহারাষ্ট্রের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে যাতে অজিতদের ঘড়ি প্রতীক ব্যবহার করতে না দেওয়া হয়, সেই আর্জি নিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করেন শরদ। মামলায় শরদের আবেদন ছিল, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অজিতদের নতুন কোনও প্রতীক বেছে নিতে নির্দেশ দেওয়া হোক। অন্যথায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এনসিপিতে ভাঙন ধরার পর অজিত গোষ্ঠীর এনসিপিকেই ‘আসল এনসিপি’ বলে চিহ্নিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানিয়েছিল, ‘এনসিপি’ নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ ব্যবহারের অধিকার পাবে অজিতের গোষ্ঠী। শরদের গোষ্ঠীর জন্য নতুন নাম এনসিপি (শরদচন্দ্র পওয়ার) বরাদ্দ করা হয়েছিল কমিশনের তরফে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগেও এক বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শরদ।
কিন্তু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ কমিশনের সেই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না করা পর্যন্ত অজিত-গোষ্ঠীর হাতেই থাকবে ‘এনসিপি’ নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক ‘ঘড়ি’ ব্যবহারের অধিকার। তবে ‘ঘড়ি’ সতর্কতা ব্যবহারের সঙ্গে সতর্কীকরণ উল্লেখ রাখার কথাও বলেছিল আদালত।