কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন। ফাইল চিত্র।
কাশ্মীর উপত্যকায় হিন্দু এবং শিখ ধর্মাবলম্বীদের ‘গণহত্যা’র তদন্ত চেয়ে করা জনস্বার্থ মামলা সোমবার খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগেও এই একই বিষয়ের উপর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টে দ্বিতীয় জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন আশুতোষ টাপলু। অভিযোগ, আশুতোষের বাবা টিকালাল টাপলুকে ১৯৮৯ সালে খুন করেছিল জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)-এর সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসবাদীরা। কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির একটি বড় অংশ ১৯৮৯-৯০ সালে উপত্যকায় কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপর ‘অত্যাচার’ এবং তাঁদের ‘বিতাড়নে’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সম্প্রতি এই নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়, যা নিয়েও বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল।
আশুতোষের আইনজীবী গৌরব ভাটিয়া আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল বিচার চাওয়ার জন্য ৩০ বছর ধরে ঘুরেছেন, কিন্তু বিচার পাননি। আদালতে ভাটিয়ার অভিযোগ, তৎকালীন জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের থেকে কোনও সাহায্য পায়নি টাপলু পরিবার। এমনকি, টিকালাল খুন হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও, তার কোনও প্রতিলিপি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এই প্রসঙ্গে ভাটিয়া আদালতে বলেন, “জেকেএলএফ-এর হাতে খুন হওয়া ব্যক্তির সন্তান জনস্বার্থ মামলাটি করেছেন। বহু দিন আগে অভিযোগ দায়ের করা হলেও, ২০২২ সালে প্রথম সরকারের তরফে স্বীকার করা হয় যে এই মর্মে অভিযোগ জমা পড়েছে।” ভাটিয়া এ-ও জানান যে, তাঁর মক্কেল মৃত বাবার মৃত্যু শংসাপত্রও বহুদিন নিতে পারেননি। ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গায় নিহত এবং আহতদের পরিবার ‘ন্যায়বিচার’ পেলে কেন উপত্যকা থেকে বিতাড়িত হওয়া কাশ্মীরি পণ্ডিতরা ‘ন্যায়বিচার’ পাবেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বক্তব্য শোনার পর, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং সিটি রবিকুমারের বেঞ্চ জানায়, হাই কোর্টগুলির উপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তাই জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারীকে হাই কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেয় শীর্ষ আদালত। জনস্বার্থ মামলা খারিজ করার ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্ট জানায় এই সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলা তারা আগেই খারিজ করে দিয়েছে। তাই এই মামলাটিকে শুনানির জন্য গ্রহণ করে তারা বৈষম্য করতে পারে না। আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী আদালতে সওয়াল করে জানান, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এমনই যে, অভিযোগ দায়ের করতে গেলেও বাধা পেতে হচ্ছে। কিন্তু এই প্রসঙ্গে আদালত পাল্টা বলে, “আমরা তো দেখছি রাজনীতিকরা দাবি করছেন কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভাল। আপনারা হাই কোর্টে যেতে পারেন।”
কিছুদিন আগেই কাশ্মীর উপত্যকা থেকে ‘বিতাড়িত’ হিন্দু এবং শিখদের পুনর্বাসন এবং কাশ্মীরি পণ্ডিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ‘উই দ্য সিটিজেন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু সেই জনস্বার্থ মামলাও খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।