দিল্লি হাই কোর্ট থেকে বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে পাঠানো হল ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইলাহাবাদ হাই কোর্টেই পাঠানা হল বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে। সোমবার এই বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করল সুপ্রিম কোর্ট। হোলির দিন থেকেই আলোচনায় রয়েছেন বিচারপতি বর্মা। তাঁর দিল্লির সরকারি বাসভবন থেকে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে। সেই আবহেই তাঁর বদলির খবর মিলল।
বিচারপতি বর্মা এত দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে নগদ উদ্ধারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দিল্লি হাই কোর্টে তাঁর বেঞ্চ বসেনি। আদালত জানিয়েছিল, ওই বেঞ্চের বিচারপতি ছুটিতে আছেন। সোমবারই দিল্লি হাই কোর্ট বিবৃতি জারি করে জানায়, ওই আদালতের সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বদলির কথা জানিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০ এবং ২৪ মার্চের বৈঠকে বিচারপতি বর্মাকে দিল্লি হাই কোর্ট থেকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়। ২০ মার্চ কলেজিয়ামের সদস্য তথা বিচারপতি বর্মাকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। সোমবার কেন্দ্রের কাছে সেই সুপারিশ পাঠানো হয়।
সম্প্রতি বিচারপতি বর্মার সরকারি বাসভবনে আগুন লাগে। অভিযোগ, আগুন নেভাতে গিয়ে সেই সময় তাঁর বাড়িতে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ দেখতে পান দমকলকর্মীরা। সেই অর্থের পরিমাণ কত, তা জানা যায়নি। সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই বিচারপতি বর্মার বদলির বিষয়টি জানাজানি হয়। যদিও এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, বিচারপতি বর্মার বদলির প্রস্তাবের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে নগদ উদ্ধারের অভিযোগের তদন্তের কোনও যোগ নেই। শীর্ষ আদালত বিবৃতিতে বলেছিল, ‘‘২০২৫ সালের ২০ মার্চ বিচারপতি বর্মাকে বদলির প্রস্তাব খতিয়ে দেখে কলেজিয়াম। সেই কলেজিয়ামে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং সুপ্রিম কোর্টের আরও চার শীর্ষ বিচারপতি।’’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যে নগদ উদ্ধারকাণ্ডে বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিকে উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে তিনি মনে করেন, আরও গভীরে গিয়ে গোটা ঘটনার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়াও দেশের তিন রাজ্যের হাই কোর্টের তিন বিচারপতির এক কমিটিও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। ‘নগদ বিতর্কে’র মধ্যেই বিচারপতি বর্মাকে বদলি করা হল। অন্য দিকে, সোমবারই ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট (বরখাস্ত) করার প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিচারপতি বর্মার জন্ম ১৯৬৯ সালে। মধ্যপ্রদেশের রেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯২ সাল থেকে আইনজীবী হিসাবে কাজ শুরু করেন। একটা সময় ইলাহাবাদ হাই কোর্টে বিশেষ আইনজীবীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৩ সালে তাঁকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট হিসেবে মনোনীত করা হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবরে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্থায়ী বিচারপতি হন। পরে তাঁকে দিল্লি হাই কোর্টে পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন।