বুধবারও ধোঁয়াশার চাদরে ঢাকা দিল্লি, বাতাসের গুণগত মান নিয়ে উদ্বেগ। ছবি: পিটিআই।
শীত এগিয়ে আসতেই দিল্লিতে বাতাসের গুণগত মান আবার খারাপ হতে শুরু করেছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। পড়শি রাজ্যগুলিতে শস্যের গোড়া পোড়ানোর জন্যই বাতাসের গুণগত মান খারাপ হচ্ছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার এই নিয়ে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্র। দিল্লির দুই পড়শি রাজ্য— পঞ্জাব ও হরিয়ানার সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে শীর্ষ আদালত।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে দিল্লির দূষণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল। মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি অভয় এস ওকা, বিচারপতি এ আমানউল্লাহ এবং বিচারপতি এজি মাসিহ্-র বেঞ্চে। কেন্দ্র পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে সংশোধনী আনার কারণে সেটি কার্যত ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট। বিশেষ করে ওই আইনের ১৫ ধারার সংশোধনীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভাঙলে কী শাস্তি রয়েছে— তা উল্লেখ রয়েছে ওই ধারায়। আদালতের মতে, সংশোধনীর মাধ্যমে (কড়া) শাস্তির বিষয়টি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেবল জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা ছাড়া সেই জরিমানা কার্যকর করার প্রক্রিয়াটিও ঠিক ভাবে এগোচ্ছে না বলেই মনে করছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের মন্তব্য, “কেন্দ্রকে কাজ করতে হবে। তারা কোনও পরিকাঠামোই এখনও তৈরি করেনি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনও দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আইনের ১৫ ধারার সংশোধনীতে আপনারা সাজা বাদ দিয়ে জরিমানার ব্যবস্থা করেছেন। সেই জরিমানা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও ঠিক মতো হচ্ছে না।”
এই মামলায় কেন্দ্রের তরফে আদালতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি। তিনি আশ্বস্ত করেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে নিময়বিধি চূড়ান্ত করে আইনও সম্পূর্ণ কার্যকর হয়ে যাবে। পঞ্জাব ও হরিয়ানা উভয় রাজ্যেরই পরিবেশ সচিব এবং কৃষি দফতরের অতিরিক্ত সচিবকে শোকজ় করা হয়েছে বলেও আদালতে জানান কেন্দ্রের আইনজীবী।
তবে আদালত মনে করছে, এই বায়ু দূষণ পরিস্থিতিকে নিয়ে কেবলই রাজনীতি করা হচ্ছে। কেন্দ্রের আইনজীবীর উদ্দেশে তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলে, “যদি পরিবেশ রক্ষার জন্য এই রাজ্য সরকারগুলি এবং আপনাদের (কেন্দ্র) সত্যিই তাগিদ থাকত, তবে আইনের ১৫ ধারায় সংশোধনী আনার আগেই (নিয়মবিধি চূড়ান্ত করার) কাজগুলি হয়ে যেত। এ সব রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।”
শীতের মরশুম শুরুর আগেই দিল্লির বায়ু দূষণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক আকার নিতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতি অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও শীতকালে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান বার বার খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে। এর একটি বড় কারণ পঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্যের গোড়া পোড়ানো। বুধবার মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির এই দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যসচিবও। শস্যের গোড়া পোড়ানো রুখতে দুই রাজ্য কী কী পদক্ষেপ করেছে, তা আদালতে বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। যদিও শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, সেগুলি ‘চোখে পট্টি পরানো’ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর আগের শুনানিতেও আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করার জন্য দুই রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালত।