2002 Bilkis Bano Case of Gujarat

বিলকিসের ধর্ষকদের মুক্তির মূল নথি চাইল সুপ্রিম কোর্ট, গুজরাত এবং কেন্দ্রকে নির্দেশ

২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। যা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে বিতর্ক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩৩
Share:

বিলকিস বানো। — ফাইল চিত্র।

গুজরাতে ২০০২ সালের গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গাপর্বে বিলকিস বানো মামলায় গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডে দোষীদের সাজার মেয়াদ শেষের আগেই মুক্তি নিয়ে কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকারের কাছে যাবতীয় নথি তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইয়াঁকে নিয়ে গঠিত শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সুনির্দষ্ট ভাবে জানিয়েছে, ১১ ধর্ষক এবং খুনির সাজার মেয়াদ শেষের আগে মুক্তির পাশাপাশি ২০০২ সালে বিলকিসের পরিবারের সাত জনকে খুনের মামলার মূল ‘রেকর্ড’ জমা দিতে হবে কেন্দ্র এবং গুজরাত সরকারকে।

Advertisement

বিলকিস মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মেয়াদ শেষের আগে মুক্তির বিরুদ্ধে দায়ের মামলার শুনানিতে আবেদনকারী পক্ষ এবং কেন্দ্র ও গুজরাত সরকারের আইনজীবীর মতামত শোনার পরে এই নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। এর আগে দেবগড় বারিয়ায় বিলকিস গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সাত সদস্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার এক দোষী রাধেশ্যাম ভগবানদাস শাহকে মুক্তি দেওয়ার আগে সিবিআই এবং মুম্বই ট্রায়াল কোর্টের কী মতামত ছিল, তা জানতে এ সংক্রান্ত মূল নথি তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। তাতে দেখা যায়, প্রাথমিক ভাবে সাজার মেয়াদ শেষে মুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেও পরে তা বদলানো হয়েছিল।

রাধেশ্যাম-সহ ১১ অপরাধীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে জানা গিয়েছে, মুম্বই ট্রায়াল কোর্টের বিচারক প্রথমে মুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলেও ২০২২ সালে জুন মাসে বিষয়টি গুজরাত সরকারের বিবেচনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বিলকিসকে গণধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সাত সদস্যকে খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালে মুম্বই ট্রায়াল কোর্ট রাধেশ্যাম-সহ ১১ জনকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিয়েছিল।

Advertisement

২০২২ সালের ১৫ অগস্ট ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাত সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। বিজেপি শাসিত গুজরাত সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছিল। এর পরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ছাড়পত্রও মেলে। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশ জুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক ও খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক বাধে। বিতর্কের মধ্যেই গুজরাত সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাঁদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে। যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাঁদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এঁদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে প্যারোলে মুক্ত থাকার সময় অপরাধ মূলক কার্যকলাপের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। মোট ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement