ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করল সুপ্রিম কোর্ট। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় এক অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মহারাষ্ট্রের ওই ঘটনায় বম্বে হাই কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেন। শীর্ষ আদালতের রায় শুনে ভেঙে পড়েছেন মৃতার বাবা। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। বাকিটা ঈশ্বরের হাতেই ছেড়ে গিয়েছেন অসহায় বাবা।
ঘটনাটি ২০১৪ সালের। মুম্বইয়ের এক রাস্তার ধারে বছর তেইশের তরুণীর পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। মুম্বইয়ে এক সংস্থায় সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়র হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশে। সেখান থেকে ছুটি কাটিয়ে ফিরেছিলেন মুম্বইয়ে। তার কয়েক দিন পরেই দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রথমে মামলাটি ছিল মুম্বইয়ের এক নিম্ন আদালতে। ২০১৫ সালেই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা দেয় আদালত। ২০১৮ সালে বম্বে হাই কোর্টও সেই রায়ই বহাল রাখে। তবে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে বেকসুর খালাস করে দেয়। শীর্ষ আদালতের রায়ে অসহায় বোধ করছেন মৃতার বাবা। ঘটনার প্রায় এক দশক পরে শীর্ষ আদালতের এই রায়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। হারিয়ে ফেলছেন লড়াই করার ক্ষমতাও।
ধর্ষণ এবং খুনের এই মামলায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না। মামলাটি অনেকটা নির্ভরশীল ছিল পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের উপর। পুলিশ রেলস্টেশনের একটি সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তকে শনাক্ত করে। অভিযুক্তের গোঁফ ছিল। তিনি ওই তরুণীর সঙ্গে হাঁটছিলেন। তাঁর হাতে ছিল তরুণীর ব্যাগ। পরে স্টেশনের এক কুলি অভিযুক্তকে শনাক্ত করে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিন বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, আদালতের কাছে দেওয়া তথ্যপ্রমাণে কিছু ফাঁক রয়েছে। মামলায় যা চোখে পড়ছে, তার চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ‘প্রমাণিত হতে পারে’ এবং ‘অবশ্যই প্রমাণিত হতে হবে’— এর মধ্যে ফারাক রয়েছে।
আদালতের রায়ের পর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে মৃতের বাবা তাঁর অসহায় পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কী আর করতে পারি? আমরা জানতাম না এমন কিছু হতে চলেছে। অভিযুক্ত যে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন, তা-ও জানতাম না। কিন্তু আমাদের এখন আর কী করার আছে? ঈশ্বরের উপরেই সব ছেড়ে দিচ্ছি। আমার মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না।” তিনি জানান, আগে যখন আদালত ফাঁসির সাজা দিয়েছিল, তাঁরা মনে শান্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু এখন রায় পুরো বদলে যাওয়ায়, এক দশক আগের সেই ক্ষত আবার দলা পাকিয়ে উঠছে তাঁর মনে।
তবে তিনি এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি আর জানাতে চান না। বছর সত্তরের বৃদ্ধ জানান, এই বয়সে বাড়ির বাইরে বেরোতে তাঁর সমস্যা হয়। স্ত্রীরও শারীরিক অবস্থা ভাল নেই। এই বয়সে আদালতে ছোটাছুটি করা তাঁর পক্ষে কঠিন বলে জানান মৃতের বাবা।