প্রতীকী ছবি।
হাজার অনুরোধেও বরফ গলেনি। এখনও সেপ্টেম্বরেই সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা জেইই-মেন এবং ডাক্তারি প্রবেশিকা নিট-ইউজি নেওয়ার বিষয়ে অনড় কেন্দ্র। ১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর আগে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি ওঠার জন্য সময় বলতেও শুধু সোমবার। এই পরিস্থিতিতে দুর্যোগ মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করে পরীক্ষা আটকে দেওয়ার জন্য সমস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিল এক ছাত্র সংগঠন।
শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের টুইটে স্পষ্ট ইঙ্গিত, পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসার প্রশ্ন নেই। এ দিনই টুইটারে নিজের একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকার তুলে দিয়েছেন নিশঙ্ক। যার বিষয়বস্তু, ‘অধিকাংশ পড়ুয়াই আসলে পরীক্ষার পক্ষপাতী’। তার একটু নীচেই সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, “এমন কোন রাজ্য আছে, যে নিজের পড়ুয়াদের ভাল চাইবে না? পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জড়িত যেখানে, সেখানে কোনও রাজ্য সহায়তা করবে না, তা কখনও হয়?”
এ দিন অনলাইনে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে রানী লক্ষ্মী বাঈ কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে বেশ কয়েক জন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করেন, তাঁরা ভবিষ্যতে কী হতে চান? সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের ক্ষোভ, “অনুষ্ঠানের সাজানো মঞ্চে পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন জিজ্ঞাসা করছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এই ভয়ঙ্কর সময়ে জোর করে পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়ায় যে কত জনের স্বপ্ন চৌপাট হতে বসেছে, সেই হুঁশ তাঁর নেই। এ বিষয়ে অন্তত একবার ছাত্র প্রতিনিধিদের মতামত শোনার আর্জি কেন্দ্রের কাছে বহু বার জানিয়েছি আমরা। কিন্তু সেই সময় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের কারও হয়নি।” সেপ্টেম্বরে পরীক্ষার প্রতিবাদে এ দিন কলকাতায় চার বাম ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি এআইএসএ এবং ছাত্র পরিষদও মিছিলে পা মিলিয়েছে বলে তিনি জানান। আর শনিবার প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে ছাত্র সংগঠন এআইএসএ সভাপতি এন সাই বালাজির আর্জি, “পড়ুয়া ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার খাতিরে পরীক্ষা আটকাতে দুর্যোগ মোকাবিলা আইন প্রয়োগ করুক রাজ্যগুলি।”
আরও পড়ুন: ফের অভিযোগ ফেসবুক-বিজেপি যোগসাজশের
বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামীরও পরামর্শ, “দুর্যোগ মোকাবিলা আইন প্রয়োগের পথে হাঁটতে পারেন মুখ্যমন্ত্রীরা। বলতে পারেন যে, পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের যে ভিড় হবে, তা করোনা-পরিস্থিতিকে আরও বিগড়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।” স্বামীর অবশ্য এও দাবি, ছয় মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টির মধ্যে ঢুকে না-পড়লে, সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা পিছোনোর একটা শেষ চেষ্টা করে দেখতেন তিনি!
পড়ুয়াদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এমন পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেওয়া নিয়ে এ দিনও সনিয়া গাঁধীর অভিযোগ, নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বিচারে ভারত যখন শীর্ষে, তখন তার মধ্যেও পড়ুয়াদের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশিকা পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিচ্ছে কেন্দ্র। পড়ুয়াদেরও প্রশ্ন, প্রতিদিন যেখানে গড় সংক্রমণের সংখ্যা ৭৫ হাজারের উপরে, মৃত্যুর সংখ্যাও ১ হাজার পার, সেখানে কী করে পরীক্ষার জেদ ধরে বসে আছে কেন্দ্র? তবে সুপ্রিম কোর্টের নতুন নির্দেশ ছাড়া আইনি ভাবে রাজ্যের পক্ষে পরীক্ষা আটকানো কতটা সম্ভব, গত কালই সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি।