দু’দিনের ধর্মঘট শেষ হতেই অনির্দিষ্ট কাল ধর্মঘটের হুমকি দিল দশটি ট্রেড ইউনিয়ন।
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ওই দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ঘোষণা, গত কাল ও আজকের ধর্মঘটের পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার কী অবস্থান নিচ্ছে, তা দেখা হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি কেন্দ্র না-মানলে, অনির্দিষ্ট কাল ধর্মঘটের কথা ভাবা হবে।
ট্রেড ইউনিয়নগুলির ধর্মঘট নিয়ে প্রথম থেকেই নিরুত্তাপ থাকার নীতি নিয়েছিল কেন্দ্র। আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলিই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। এই ধর্মঘট পুরোপুরি অযৌক্তিক। সত্যিই ধর্মঘটের কোনও কারণ আছে, নাকি রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে বলেই বামেদের এই প্রতীকী প্রতিবাদ— সেই প্রশ্ন তুলেছেন জেটলি। বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় বাম দলগুলির শক্তি যথেষ্ট কমেছে। কেরলে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আবহ তৈরি হয়েছে।’’
বাস্তবে অবশ্য একমাত্র সঙ্ঘ পরিবারের ট্রেড ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নই ধর্মঘটে গিয়েছিল। কয়েকটি রাজ্য ছাড়া এই ধর্মঘট সর্বাত্মক বন্ধের চেহারা নেয়নি। ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের দাবি, কেরল, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, ওড়িশার মতো রাজ্য এবং পুদুচেরিতে ধর্মঘট বন্ধের চেহারা নিয়েছে। বিহার, গোয়াতেও প্রভাব পড়েছে। অধিকাংশ রাজ্যের শিল্পাঞ্চলই বন্ধ থেকেছে। গুরুগ্রাম শিল্পাঞ্চলে অধিকাংশ বহুজাতিক সংস্থাতেই কাজ হয়নি। পুরো পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রেই কাজ বন্ধ থেকেছে বলে তাঁদের দাবি। আজ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে মূলত ব্যাহত হয়েছে পরিবহণ ও ব্যাঙ্ক পরিষেবা। তিরুঅনন্তপুরমে এসবিআইয়ের একটি শাখায় ভাঙচুর হয়েছে। কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, ওড়িশা— রেল আটকানোর চেষ্টা হয়েছে সর্বত্রই। বেঙ্গালুরুর কাছে পাথর পড়েছে সরকারি বাসে। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতেও ব্যাহত হয়েছে ব্যাঙ্ক পরিষেবা। এ ক্ষেত্রে মুম্বইয়ে প্রায় উল্টো ছবি। তবে সেখানেও সরকারি বাস প্রায় ছিল না।
শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, তাদের ১২ দফা দাবি মানা হচ্ছে না। উল্টো দিকে শ্রমিকদের জন্য কী কী করা হয়েছে, তার ১০ দফা বৃত্তান্ত শুনিয়েছে কেন্দ্র। যা উড়িয়ে দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। সিটু নেতা তপন সেন বলেছেন, ‘‘গত বছরের অগস্টে শ্রমিক সংগঠনগুলির সম্মেলন থেকেই অনির্দিষ্ট কাল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল।’’ এআইটিইউসি নেত্রী অমরজিৎ কৌরের কথায়, ‘‘রেলের কর্মী সংগঠনগুলির পক্ষে এক-দু’দিনের জন্য ধর্মঘটে যাওয়া মুশকিল। ওরা যে দিন সিদ্ধান্ত নেবে, সে দিন থেকেই অনির্দিষ্ট কালের ধর্মঘট শুরু হবে।’’