আশ্রয়হীন ফুটপাতবাসীরাই ছিল তার শিকার। রাতের অন্ধকারে ভারী জিনিসের আঘাতে অসহায় ওই ঘুমন্তদের খুন করত সে। কেরলের এই ত্রাসের নাম, মোট্টা নাভাস।
১৯৬৬ সালে মোট্টার জন্ম কোল্লামে। ২০১২-র জুন থেকে অগস্ট আবধি এই সাইকোপ্যাথ সিরিয়াল কিলারের দাপটে ত্রস্ত ছিল কেরলের কোল্লাম শহর।
তবে অপরাধে তার হাতেখড়ি ১৯৯৬ সালে। কোল্লামে মুন্ডক্কলে জনৈক রাজশেখরণকে খুনের দায়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। কিন্তু চার বছর কারাদণ্ডের পরে প্রমাণের অভাবে সে ছাড়া পেয়ে যায়।
২০১২-এ আবার শিরোনামে এই হত্যাকারী। সে সময় কেরলের কোল্লামে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছিল ফুটপাতবাসীদের। গভীর রাতে ভারী অস্ত্র দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হচ্ছিল তাঁদের মাথা।
সে বছর প্রথম অপরাধ প্রকাশ্যে আসে ৬ জুন। নির্মীয়মাণ উড়ালপুলের নীচে ৬৫ বছর বয়সি এক প্রৌঢ়কে খুন করা হয়।
পরের দিন খুন করা হয় আপ্পুকুট্টাম আচারি নামে এক আশ্রয়হীনকে। তাঁর মেরুদণ্ডে আঘাত করা হয়েছিল ভারী পাথর দিয়ে।
এর পর দিন কয়েকের বিরতি। ১৮ জুন ফের এক উড়ালপুলের নীচে একই পদ্ধতিতে তৃতীয় খুন। এ বার ঘাতকের শিকার ৬৫ বছরের বোন্দন কুমার। তাঁর মাথায় বড় পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল।
অগস্টে, পরের হত্যাকাণ্ডে সবাই শিউরে উঠল। কোল্লামের সস্থমকোট্টা এলাকায় বাসস্ট্যান্ডে রাতে ঘুমোচ্ছিলেন ৫৫ বছর বয়সি থঙ্কপ্পন। ঘুমের মধ্যে তাকে খুন করা হয় পাথরের আঘাতে।
ঘাতকের পঞ্চম শিকার ২১ অগস্ট রাতে। কোল্লামের চিন্নক্কড়া এলাকায় পুরসভা এলাকার বারান্দায় ঘুমোচ্ছিলেন ৪৫ বছরের সুদর্শন। তাঁকেও মাথায় আঘাত করা হয় পাথর দিয়ে।
আরও দু’জন অসহায় আশ্রয়হীনকে খুনের চেষ্টা করেছিল মোট্টা নাভাস। কিন্তু তাঁরা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান।
পর পর খুনের ঘটনায় পুলিশের নজর প্রথম থেকেই ছিল মোট্টা নাভাসের উপরে। কারণ, তার নাম আগেই পুলিশের খাতায় ছিল। দ্বিতীয়ত, তাকে রাতের অন্ধকারে কোল্লামের পথে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখা যেত। তৃতীয়ত, সব ক্ষেত্রে খুনের ধরন ছিল একইরকম। ফলে তার উপর সন্দেহ দৃঢ় হতে সময় লাগেনি।
২০১২ সালে কোল্লামে দ্বিতীয় খুনের পরেই তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। মানসিক ভাবে অপ্রকৃতস্থ ছিল বলে তাকে পাঠানো হয় তিরুঅনন্তপুরমের অ্যাসাইলামে। কিন্তু চিকিৎসকরা তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা খুঁজে পাননি।
পরে তদন্তে জানা যায়, অ্যাসাইলাম থেকে ছাড়া পেয়ে কোল্লামে ফিরে ধারাবাহিক ভাবে খুন করে মোট্টা নাভাস। রাতে টহলদারি পুলিশের চোখে পড়লেই সে পাগলামির ভান করত। পুলিশের ভ্যান চলে গেলেই বেরিয়ে আসত তার খুনি চেহারা।
২০১২ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয় মোট্টা নাভাসকে। তদন্তে জানা যায়, রাত আটটার সময় ঘুমোতে যেত সে। এর পর গভীর রাতে পথে নামত শিকারের সন্ধানে। মাদকাসক্ত এই সাইকোপ্যাথ খুনি এখনও বন্দি। (ছবি: আর্কাইভ ও সোশ্যাল মিডিয়া)