প্রতীকী ছবি।
দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে রেকর্ড হল আজও। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান বিষয়ক মুখ্য উপদেষ্টা কে বিজয়রাঘবন মনে করছেন, কড়া পদক্ষেপ হলে করোনার তৃতীয় ঢেউকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। দু’দিন আগে এই তৃতীয় ঢেউকে ‘অবশ্যম্ভাবী’ বলেছিলেন তিনিই। কিন্তু এ বার সাংবাদিক বৈঠকে বিজয়রাঘবন বলেছেন, ‘‘বিভিন্ন স্তরে কতটা কঠোর ভাবে নিয়মবিধি মানা হচ্ছে, তার উপরেই এটি নির্ভর করছে।’’
ফলে লকডাউন নিয়ে চর্চা চলছেই। দৈনিক ৫০ হাজার সংক্রমণের মুখে কর্নাটক সরকার আগামী ১০ থেকে ২৪ মে টানা লকডাউন ঘোষণা করেছে। অত্যাবশ্যক পরিষেবায় ছাড় রয়েছে। মুদির দোকান খোলা থাকবে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। চণ্ডীগড়ে সপ্তাহান্তের লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। গোয়ায় কার্ফু চলবে ৯ থেকে ২৩ মে।
এ দিকে, টিকাকরণের গতি বাড়ানোর সার্বিক দাবির প্রেক্ষিতে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)। তাতে বলা হয়েছে, যে কোনও ব্যক্তি বা বেসরকারি সংস্থা নির্দিষ্ট শর্ত মেনে বিদেশ থেকে টিকা আমদানি করতে পারবে। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের টিকাকরণ কর্মসূচির কোনও সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে রাজ্য সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সামনে সরাসরি টিকা আমদানি ও তা ব্যবহারের পথ খুলে গেল। শর্তে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট টিকাটি ইতিমধ্যেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেয়ে থাকলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা না-হলে সিডিএসসিও-র অনুমোদন লাগবে। আমদানির লাইসেন্সও নিতে হবে। অর্থাৎ বিদেশ থেকে অক্সফোর্ডের টিকা (এ দেশে যা কোভিশিল্ড) বা স্পুটনিক-ভি সরাসরি আমদানিতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ফাইজ়ার, মডার্না বা জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, ১৮-৪৪ বছর বয়সের ১১.৮ লক্ষ দেশবাসীর এখনও পর্যন্ত টিকাকরণ হয়েছে। রাজ্যগুলির কাছে ৯০ লক্ষ ডোজ়ের বেশি টিকা রয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, তিন মাসের মধ্যে রাজধানীর সমস্ত বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। আজ রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেজরীবাল বলেন, ‘‘এখন দিল্লিতে আর অক্সিজেনের ঘাটতি নেই। দেখতে হবে, যথেষ্ট সংখ্যক অক্সিজেন-যুক্ত শয্যা যেন থাকে— যাতে কোনও রোগী বঞ্চিত না-হন। সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ প্রতিরোধের লক্ষ্যেই দ্রুত টিকাকরণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কেজরীবাল জানিয়েছেন, দিল্লির সমস্ত সংবাদমাধ্যমের অফিসে সরকারি খরচেই সাংবাদিকদের টিকাকরণ হবে।
সার্বিক ভাবে সারা দেশে আজ ফের রোগী বাড়লেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের মতো বেশ কিছু রাজ্যে সংক্রমণের লেখচিত্র আস্তে আস্তে নেমে আসছে। একটি গাণিতিক মডেলে এ-ও দাবি করা হয়েছে যে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শীর্ষ ছোঁয়ার পরে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ কমতে শুরু করবে। তবে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অ্যান্টনি ফাউচি একটি সাক্ষাৎকারে আবার বলেছেন যে, ভারতে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে হলে লকডাউনই জরুরি। ছ’মাস না-হোক, পরিস্থিতি বিচার করে অন্তত দুই, চার বা ছ’সপ্তাহের জন্য তা করতে হবে। তাঁর মতে, এর পাশাপাশিই দরকার যত বেশি সম্ভব টিকাকরণ এবং অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সাহায্যও নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ত্রিপুরা, মণিপুর ও সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ মন্ত্রক জানিয়েছে, যে সরকারি কর্মীরা বিশেষ ভাবে সক্ষম কিংবা সন্তানসম্ভবা, তাঁদের ৩১ মে পর্যন্ত অফিসে এসে কাজ করতে হবে না। মহারাষ্ট্র অবশ্য তৃতীয় ঢেউয়ের প্রস্তুতি হিসেবেই শিশুদের জন্য কোভিড সেন্টার ও টাস্ক ফোর্স গঠনের কাজ শুরু করেছে।