টহল: বুধবারের শ্রীনগর। পিটিআই
মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনাতি। বেকারত্ব। স্তব্ধ ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ। জঙ্গি-সেনা গুলিযুদ্ধ। গ্রেফতার। জনগণের সম্পত্তি নষ্ট।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও এই সবই তাঁদের সঙ্গী বলে অভিযোগ করছেন ভূস্বর্গবাসীরা। তাঁদের কাছে এটি ‘দুর্দশার এক বছর’।
গত বছর ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপের পরে বিজেপি সরকার দাবি করেছিল, এ বার কাশ্মীরে হিংসা কমবে। স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি। কিন্তু উপত্যকার বিখ্যাত নিবন্ধকার তথা আইনের শিক্ষক শেখ সওকত হোসেনের অভিজ্ঞতা অন্য রকম।
বুধবার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের এক বছর পূর্তির দিনে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সোমবার থেকেই শ্রীনগরে কার্ফু জারি করেছিল প্রশাসন। সেই দিকে ইঙ্গিত করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টুইটারে সওকত অভিযোগ করেন, ‘‘পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আমরা অবরুদ্ধ, পরাজিত নই। এই কঠিন সময়ে বিশ্বাস এবং আদর্শই জাতিকে টিকিয়ে রাখতে পারে।’’ আর এ দিন সওকতের কটাক্ষ, যে সব ‘উন্নয়ন’ চোখে পড়ছে, সেগুলি হল— কাশ্মীরে হিংসা বৃদ্ধি। বাড়ছে সেনার পদধ্বনি। অবরুদ্ধ রাস্তাঘাট।
গত বছরের অগস্টে কাশ্মীরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল হাই-স্পিড ইন্টারনেট। মোবাইলে এখনও হাই-স্পিড ইন্টারনেট অধরা। যা রয়েছে, তা অতি নিম্নমানের টু-জি ইন্টারনেট। ব্রডব্যান্ডের স্পিডও তথৈবচ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি, কাশ্মীরে এত দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ঘটনা কোনও গণতন্ত্র এই প্রথম। শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর কোভিড ওয়ার্ডে কাজ করেন চিকিৎসক আজাজ়। তিনি বলেন, ‘‘ইন্টারনেট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমরা তার সুবিধা পাচ্ছি না। এতে তো কোভিডের চিকিৎসাও ধাক্কা খাচ্ছে।’’
গত এক বছর ঘরবন্দি উপত্যকার শিশুরাও। কাশ্মীরে প্রায় ১০ হাজার স্কুলে ২৫ লাখের বেশি পড়ুয়া রয়েছে। প্রশাসনের দাবি, তাদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একে ৩৭০ বিলোপের ধাক্কা, তার উপরে করোনা। টানা স্কুল বন্ধ। অভিভাবকদের ক্ষোভ, ধীর ইন্টারনেট এবং টানা লকডাউনের কারণে বাচ্চারা বাড়িতেও পড়ায় মন দিতে পারছে না।
কাশ্মীর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রেসিডেন্ট শেখ আশিক জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ অগস্টের পর থেকে কাজ হারিয়েছেন পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ। ক্ষতির পরিমাণ ৪৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জেকে কোয়ালিশন অব সিভিল সোসাইটি বলছে, চলতি বছরের প্রথম দিকে উপত্যকায় ২২৯ জন নিহত হয়েছেন। জঙ্গি-সেনা গুলিযুদ্ধের সময় ৫৫ বার বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন: মুখে নিলেন না আডবাণীর নাম
বিপাকে সাংবাদিকেরাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার অভিযোগে গত এপ্রিলে ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে মহিলা চিত্রসাংবাদিক মাসরাত জ়াহারার বিরুদ্ধে। একই আইনে মামলা হয়েছে সাংবাদিক গওহর গিলানির বিরুদ্ধেও। একটি খবর করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাংবাদিক পিরজ়াদা আশিককে। দু’বছর ধরে জেলে রয়েছেন সাংবাদিক আসিফ সুলতান।
কোথায় এর শেষ, কেউ জানে না।
আরও পড়ুন: ভোট প্রচার: ফের মত চাইল কমিশন