ট্রাম্পকে নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না সাউথ ব্লকের

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে রসিকতার ছলে একটি কথা প্রায়শই বলা হচ্ছে। তা হল, ট্রাম্পের হৃদয়ে পৌঁছানোর রাস্তা একটাই। সেটি হল বাণিজ্যিক লেনদেন।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৩
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক সাউথ ব্লককে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বৈঠকের এই ইতিবাচক পরিবেশকে ভবিষ্যতেও ধরে রাখতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।

Advertisement

এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে রসিকতার ছলে একটি কথা প্রায়শই বলা হচ্ছে। তা হল, ট্রাম্পের হৃদয়ে পৌঁছানোর রাস্তা একটাই। সেটি হল বাণিজ্যিক লেনদেন। দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকের পরে বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ মনে করছে, চিনের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যযুদ্ধ যখন কমার কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না তখন ওয়াশিংটনে‌র পাশে থাকলে ভারতেরই রাজনৈতিক সুবিধা। সূত্রের খবর, সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছে। বিদেশসচিব বিজয় গোখলে জানিয়েছেন, আমেরিকার থেকে আমদানি বাড়াবে ভারত। প্রধানমন্ত্রী মোদী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন, নতুন করে ৪০০ কোটি ডলার অঙ্কের আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে। বেশ কিছু মার্কিন পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়াকেও কার্যকরী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে কথাও বলা হবে জানা গিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মত, দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের বাণিজ্যিক ভাবে আমেরিকার কাছে আকর্ষণীয় করে রাখতে হলে আগে নিজেদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। নয়তো ফল পাওয়া যাবে না।

তবে অর্থনীতি বা বাণিজ্যই শেষ কথা নয়। সূত্রের খবর, মূলত দু’টি ক্ষেত্রে আঞ্চলিক কৌশলগত সঙ্কট ভারতকে মার্কিন প্রশ্নে যথেষ্ট চিন্তায় রেখেছে। প্রথমটি হল উপসাগরীয় অঞ্চলে মেঘ ঘনীভূত এবং তা ভারতের শক্তি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সম্প্রতি মোদীর বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফরই প্রমাণ করে দিচ্ছে, তাঁর দ্বিতীয় ইনিংসেও এই অঞ্চলের উপরে দেশের নির্ভরশীলতা ক্রমশ বাড়বে। গ্যাস পাইপলাইন এবং তেলের আমদানির দিকটি তো রয়েছেই। পাশাপাশি এটাও মাথা রাখা হচ্ছে যে প্রায় ষাট লক্ষ ভারতীয়ের বসবাস এবং জীবিকার সঙ্গে যুক্ত এই অঞ্চল। কিন্তু ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সংঘাত যে পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তাতে এখানে প্রবল রাজনৈতিক টালমাটাল আসন্ন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এর পর ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তা হলে উত্তেজনা আরও বাড়বে। ইউরোপের দেশগুলির মতো ভারতও চাইছে আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে তাপমাত্রা কিছুটা কমাতে। জি-৭ বৈঠকে হঠাৎ করেই ফরাসি উদ্যোগে ডেকে আনা হয়েছিল ইরানের বিদেশমন্ত্রীকে। মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে কিছু আলোচনাও তিনি করেছেন বলে খবর।

Advertisement

দ্বিতীয় সমস্যা ক্ষেত্রটি হল কাবুল। দ্রুত মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের জন্য মরিয়া ট্রাম্প, তালিবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সারতে চাইছেন পাকিস্তানের সাহায্য নিয়ে। ইসলামাবাদও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই আঞ্চলিক খেলা থেকে ভারতকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে ছাড়বে না। আশঙ্কা, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সফল ভাবে ভারত-বিরোধিতার মোড়কে প্রচার করতে না পারার (এখনও পর্যন্ত) প্রতিশোধ ইমরান খান সরকার নেবে, আফগানিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তৈরি করা প্রভাব ও সুনামকে নষ্ট করে। পাশাপাশি এ কথাও সতর্কতার সঙ্গে ভারতকে মাথায় রাখতে হচ্ছে যে উপত্যকায় কোনওভাবে শান্তি নষ্ট হলে বা হিংসা ছড়ালে পাকিস্তান তা নিয়ে প্রবল হইচই শুরু করবে। তখনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাসিমুখ বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিদেশ মন্ত্রকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement