মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রভাব বাড়াচ্ছে পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং লস্করের কিছু মডিউল। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতৃত্বের যোগসাজশের প্রমাণ পেয়েছে সাউথ ব্লক। বাংলাদেশ-মায়ানামার সীমান্তেও এই গোষ্ঠীগুলির প্রভাব রয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক মায়ানমার সফরে বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের নেতৃত্বের মধ্যে কথা হয়েছে। স্থির হয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ভারত-মায়ানমার-বাংলাদেশের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের একটি মেকামিজম তৈরি হবে।
কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর— সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী যৌথ কিছু কার্যকলাপের সময়ে নয়াদিল্লি এবং ঢাকার কাছে খবর আসে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের ঠিক আগে বাংলাদেশের রাখাইন প্রদেশে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে আইএসআই। সেখানে মায়ানমারের সেনা ও নিরাপত্তা কর্মীদের উপরে রোহিঙ্গাদের হামলার পিছনেও রয়েছে আইএসআই মস্তিষ্ক। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-র অন্যতম মাথা হাফিজ তোহারের নামটি উঠে আসছে পাক গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে মূল সংযোগকারী হিসেবে। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আইএসআই-এর সঙ্গে তোহারের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
রাখাইন প্রদেশে হামলার আগে, অগস্ট মাসের শেষ দিকে এক আইএসআই-কর্তার সঙ্গে ফোনে তোহারের বিস্তারিত কথা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। আক্রমণের গোটা পরিকল্পনাটিই ফোনে করা হয়েছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা।
অগস্টের ২৪ তারিখের রাতে ‘আরসা’ জঙ্গিরা রাখাইন প্রদেশে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ৩০টি ছাউনি ও সেনাদের একটি ছাউনিতে একযোগে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৫০ জনকে হত্যা করে। পর দিন থেকেই ‘আরসা’ দমনে রাখাইনে অভিযানে নামে সেনারা। তার পর থেকেই হাজার হাজার মানুষ মায়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একটি ছোট মডিউল তৈরি করেছে এই তোহার, যার নাম ‘আকা মাল মুজাহিদিন’ বা এএমএম। এর সদস্যেরা পাকিস্তানে গিয়ে লস্করের কাছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে। গত বছর অক্টোবর মাসে রাখাইন প্রদেশে হামলার পিছনেও প্রধান ভূমিকা ছিল এই হাফিজ তোহারের। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানে কিছু এমএমএম জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর পরে রাখাইন প্রদেশ এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির থেকে কিছু নতুন ক্যাডারকে বেছে নেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে প্রশিক্ষণ শিবির খুলে সেখানে তাদের অস্ত্রশিক্ষা দেওয়া
হয়। বাংলাদেশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে বেশ কিছু রোহিঙ্গা জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার আশফাক এবং মেজর সালামত— আইএসআই-এর এই দুই কর্তা এএমএম-র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশের জেএমবি-র সঙ্গে এএমএম-র যোগাযোগ তৈরির কাজটিও সযত্নে করছে আইএসআই। উদ্দেশ্য, গোটা অঞ্চলের সুস্থিতি নষ্ট করে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া।
এই গোটা পরিপ্রেক্ষিতটি নিয়ে আলোচনার পরেই ভারত-মায়ানমারের সাম্প্রতিক যৌথ বিবৃতিটিতে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলার প্রসঙ্গটি বিস্তারিত ভাবে তুলে আনা হয়েছে। নাম না-করে পাকিস্তান তথা আইএসআই-কে বার্তাও দিয়েছে ভারত-মায়ানমার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলা হয়েছে, ‘ভারত এবং মায়ানমার দু’দেশই একমত যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সব রাষ্ট্র এই জঙ্গিপনাকে আর্থিক এবং অন্যান্য মদত দিয়ে চলেছে, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’