রাহুল গাঁধীর উত্তরসূরি বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর ইস্তফা রোখার জন্য এআইসিসিতে ধর্না চলছে। কেউ গাছে উঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন, কেউ রক্ত দিয়ে চিঠি লিখছেন। কিন্তু রাহুল অনড়ই। এরই মধ্যে নিজের কেন্দ্র রায়বরেলীর রেল-কোচ কারখানাকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়ায় চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আজ সংসদে সরব হলেন সনিয়া গাঁধী।
অমেঠীতে হারের পরে এখনও সেখানে যাননি রাহুল। যদিও তাঁর যাওয়া উচিত বলে মনে করেন দলেরই অনেকে। আজ যখন সনিয়া লোকসভায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে তুলোধনা করছেন, তখনও রাহুল অনুপস্থিত ছিলেন। যদিও পরে এসে বসেন মায়ের পাশে। কিন্তু ততক্ষণে সনিয়ার বক্তব্য শেষ। তিনি শুধু নিজের রায়বরেলীর রেল কারখানার প্রসঙ্গ তুলেই ক্ষান্ত হননি, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেহাল দশা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। সনিয়ার অভিযোগ, যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে এক সময় নেহরু ‘আধুনিক ভারতের মন্দির’ বলেছিলেন, কিছু শিল্পপতির ফায়দা করতে গিয়ে আজ তারাই বিপদের মুখে।
রাহুল ইস্তফার অবস্থানে অনড় থাকাতেই সংসদে আরও সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সনিয়া। দলের নেতাদের জানিয়েছেন, এ বার থেকে নিয়মিত সংসদে সরব হবেন। এত দিন দলের অন্য নেতাদের উৎসাহিত করে পিছন থেকে নেতৃত্ব দিতেন। এ বারে সামনে থেকে হাল ধরবেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরেই খবর আসছিল, রায়বরেলীর রেল কোচ কারখানাটি আলাদা সংস্থা করা হবে। সনিয়া বলেন, ‘‘এটা বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ। দেশের অমূল্য সম্পত্তি নামমাত্র দামে কিছু শিল্পপতির হাতে তুলে দেওয়ার প্রথম প্রক্রিয়া। এতে হাজার হাজার কর্মী বেকার হন। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ধাঁচেই এর কাজ শুরু হয়েছিল মনমোহন সিংহের জমানায়। এখন শ্রমিক-কর্মচারীদের না জানিয়েই সরকার রহস্য বজায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’
মোদী প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরেই রেল বাজেট পেশ করা বন্ধ করেন। সনিয়া আজ তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সঙ্গে দাবি তোলেন, যে ভাবে বেসরকারিকরণের দিকে হাঁটা হচ্ছে, তা সাংসসদের খতিয়ে দেখা দরকার। বিএসএনএল, এমটিএনএল, হ্যালের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দুর্দশা, কর্মীদের বেতন, মুষ্টিমেয় শিল্পপতির ফায়দা ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলে সরব হন। আজ সনিয়া যখন বলছিলেন, বিজেপি শিবিরের কেউ টুঁ শব্দটি করেননি। প্রথম সারিতে বড় মাপের নেতা বলতে উপস্থিত ছিলেন রাজনাথ সিংহ।
কংগ্রেসের এক সাংসদ পরে জানান, ‘‘রাহুল গাঁধী যেহেতু নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন, সনিয়া গাঁধীর এই সক্রিয়তা বাকিদের চাঙ্গা করবে। তবে আমরা চাই, রাহুলও ইস্তফার অবস্থান থেকে সরে এসে সংসদ ও সংগঠনে সক্রিয় হোন।’’ কিন্তু এখনও তার ইঙ্গিত মেলেনি। এখনও অবধি রাহুলের উত্তরসূরি হিসেবে সুশীল কুমার শিণ্ডেই এগিয়ে বলে কংগ্রেস জানাচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ একটাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনিই ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদ’ শব্দগুচ্ছ চালু করেছিলেন। ফলে তাঁকে সভাপতি করলে বিজেপি বাড়তি অক্সিজেন পাবে, এমন যুক্তি কংগ্রেসের কেউ কেউ গাঁধী পরিবারের কানে তুলতে চাইছেন বলে গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে।