অসহিষ্ণুতা নিয়ে চুপ কেন প্রধানমন্ত্রী, তোপ সোনিয়ার

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণু পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা শুধু কবি সাহিত্যিক মহলে আর সীমিত নেই। তাতে এখন স্বর মেলাতে শুরু করেছেন, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে শিল্প কর্তারাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৯
Share:

দেশ জুড়ে অসহিষ্ণু পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা শুধু কবি সাহিত্যিক মহলে আর সীমিত নেই। তাতে এখন স্বর মেলাতে শুরু করেছেন, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে শিল্প কর্তারাও। এমনকি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন ধাক্কা খাবে বলে অশনিসংকেত দিচ্ছে আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলিও। আর তাতেই ভরপুর অক্সিজেন পেয়ে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক প্রতিবাদকে আজ সদলবলে রাইসিনার চুড়োয় পৌঁছে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোদী সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে কংগ্রেস প্রতিনিধি দলকে নিয়ে আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন সনিয়া-রাহুল। তার পর অসহিষ্ণু পরিবেশের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আর এস এসকে কাঠগড়ায় তুলে রাইসিনায় দাঁড়িয়েই তীব্র আক্রমণ করেন মা-ছেলে!

Advertisement

রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারক লিপি পেশ করে বেরিয়ে এসে সনিয়া বলেন, ‘‘গোটা দেশে অসহনশীলতা ও ভয়ের পরিবেশ কায়েম হয়েছে। এমন নয় যে এটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা। এর নেপথ্যে সরকারের সঙ্গে জুড়ে থাকা কিছু লোক ও মতাদর্শের সুচিন্তিত রণনীতি রয়েছে। যারা দেশের বহুরঙ্গীয় সংস্কৃতিকে নষ্ট করতে চাইছেন। এবং তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে রকম নীরব তাতেই পরিষ্কার যে এ ব্যাপারে তাঁর সম্মতি রয়েছে।’’

সনিয়া তথা কংগ্রেসের এই রাজনৈতিক অভিযান লঘু করে দিতে গতকালই বিহারে নির্বাচনী প্রচার সভা থেকে টিপ্পনি করেছিলেন মোদী। ৮৪’র শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলে বলেছিলেন, ‘‘এর পরে কংগ্রেসের মুখে সহিষ্ণুতার কথা শোভা পায় না। ডুবে মরুন।’’ আজ আবার সকালে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘অসহিষ্ণুতা কোথায়? এ দেশ বরাবর সহনশীল ছিল এখনও রয়েছে। কিছু লোক অসহিষ্ণুতার সমালোচনা করছেন, সে তো ভালো কথা!’’

Advertisement

কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রী যেন অবিচল! অতীতে জমি অধ্যাদেশ বিরোধী অভিযানের মতো সেই শরীরী ভাষা, মিছিলে পা বাড়িয়ে তেমনই ক্ষীপ্র গতি! যেন বুঝতে পারছেন অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিল্পমহল এবং সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের অসন্তোষ বাড়ছে মোদী সরকারের। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও দলের বর্ষীয়াণ এবং প্রবীণ নেতা সাংসদদের নিয়ে আজ বিকেল বিকেল সংসদ চত্বর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশে হাঁটা লাগান সনিয়া। তবে তিনি মিছিলের নেতৃত্ব দিলেও পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে কৌশলে এগিয়ে দেন রাহুলকেও। কারণ, জাতীয় স্তরে বাম ও ধর্মনিরপক্ষে শক্তিগুলিকে পাশে তাঁর নেতৃত্ব যেমন জরুরি, তেমনই কংগ্রেসের রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন রাহুলই। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মায়ের সমালোচনার পর তাই মাইকের সামনে এসে দাঁড়ান কংগ্রেস সহ সভাপতি। তার পর ততোধিক সুর চড়িয়ে বলেন,‘‘একদিকে গুজব ছড়িয়ে নীরিহ মানুষকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, গোটা দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, প্রতিবাদে লেখক সাহিত্যিকরা তাঁদের পুরস্কার-সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নাকি নজরে কিছুই পড়ছে। এ ব্যাপারে একটি শব্দ খরচেরও প্রয়োজন বোধ করছেন না প্রধানমন্ত্রী! দেশের জন্য এর থেকে বিপজ্জনক আর কী হতে পারে!’’ হরিয়ানার দলিত শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কুকুরের গায়ে ঢিল ছোঁড়ার সঙ্গে তুলনা করে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ যে মন্তব্য করেছিলেন সেই প্রসঙ্গও তোলেন রাহুল। তার পর বলেন, ‘‘আর এস এস এবং বিজেপি চক্রান্ত করেই সমাজে বিভাজন ঘটনাতে চাইছে।’’

প্রসঙ্গত, অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে লেখক সাহিত্যিকদের প্রতিবাদের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সম্প্রতি বলেছিলেন, এগুলো হচ্ছে ভেক বিপ্লব! সরকারের বিরুদ্ধে এই সব প্রতিবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ‘তৈরি’ করা হচ্ছে। জেটলির সেই মন্তব্য নিয়েও আজ এক হাত নেন রাহুল।

স্বাভাবিক ভাবে সনিয়া-রাহুলের এই আক্রমণ মোকাবিলায় আজ পাল্টা মন্তব্য ধেয়ে আসে শাসক দলের থেকে। প্রধানমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সুরেই শিখ দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে বেঙ্কাইয়া নায়ডু প্রকাশ জাভরেকররা সমালোচনা করেন কংগ্রেসের। আবার বিজেপি অনুগামী একটি শিখ সংগঠন আজ কংগ্রেসের অভিযান শুরু হওয়ার আগে ’৮৪-র দাঙ্গা নিয়ে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাৎপর্যপূর্ণ হল, সংসদ ভবন থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত কংগ্রেসের মিছিল আজ কভার করতে গিয়েও আজ পুলিশের কাছে বাধা পান সাংবাদিকরা।

তবে প্রশ্ন হল, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনকে উচ্চতা দিতে নিজেই কেন পথে নেমে পড়লেন সনিয়া?

রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এর একটি ক্ষুদ্র কারণ রয়েছে, একটি বৃহৎ কারণ। পরশু বিহারে শেষ দফার ভোট গ্রহণ হবে। বিহারের এই অঞ্চল মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। তার আগে সনিয়া গাঁধীর অভিযান আজ যেভাবে সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার হয়েছে ও তা নিয়ে হইচই হয়েছে তা বিহারে শেষ দফার ভোটে প্রভাব ফেলবে বলে কংগ্রেস আশাবাদী। সনিয়ার দ্বিতীয় ও বৃহৎ লক্ষ হল, নরেন্দ্র মোদীকে বিভাজনের রাজনীতির মুখ হিসাবে প্রতিপন্ন করা। তা শুধু ঘরোয়া রাজনীতিতে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও। মোদী সরকারের জমি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ঠিক এভাবে কেন্দ্রে শাসক দলকে কৃষক বিরোধী হিসাবে তুলে ধরতে সফল হয়েছিলেন সনিয়া-রাহুল। তাতে অশনিসংকেত দেখে শেষমেশ জমি অধ্যাদেশ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয় সরকার। এবার সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছেন সনিয়া।

শুধু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক নয়, বিজেপি নেতারাও বুঝতে পারছেন অসহিষ্ণুতার পরিবেশের বিরুদ্ধে এই লড়াইকে মা-ছেলে এখন অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চান। বিহার ভোটে বিজেপি জিতলে ভালো। নইলে এই বিষয়কে হাতিয়ার করেই অদূর ভবিষ্যতে সংসদের ভিতরে বাইরে সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ার চেষ্টা করবেন মা-ছেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement