সংসদে ভাষণ সনিয়া গাঁধীর। ছবি: টুইটার।
সংসদে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের কঠোর সমালোচনায় মুখর হলেন সনিয়া গাঁধী। বললেন, ‘‘সংবিধানে যাঁদের কোনও আস্থাই নেই, সংবিধান রচনায় যাঁদের পূর্বসূরিদের কোনও ভূমিকাই ছিল না, তাঁরাই আজ সংবিধানের নামে শপথ নিচ্ছেন। এর চেয়ে বড় হাস্যকর ব্যাপার আর কী হতে পারে!’’ অসহিষ্ণুতা ইস্যুতেই কংগ্রেস সভানেত্রীর এই কড়া সরকার বিরোধী বয়ান। তাঁর কথায়, সংবিধান দিবসের মতো দিনেই এ কথা ভেবে ভারাক্রান্ত হতে হয় যে, দেশের সংবিধানের যে সব নীতি দশকের পর দশক আমাদের পথ দেখিয়েছে, সেই নীতিগুলিই এখন গভীর সঙ্কটে।
সংবিধান দিবসকে উপলক্ষ করে হুবহু সনিয়া গাঁধীর সুরেই মুখ খুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুধবার রাতেই টুইট-বার্তার মাধ্যমে দেশের সংবিধানের মূল ভাবধারা রক্ষা করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন মমতা। তবে তৃণমূলনেত্রীর প্রতিবাদ এক লাইনেই সীমাবদ্ধ। বৃহস্পতিবার সংসদে কংগ্রেস সভানেত্রীর সুর ছিল অনেক বেশি চড়া।
আরও পড়ুন:
সংবিধানের মূল ভাবধারাই বিপন্ন, টুইটে খোঁচা মমতার
‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সংবিধানে রাখতেই চাননি অম্বেডকর, দাবি রাজনাথের
সনিয়া এ দিন যখন ভাষণ শুরু করেন, তখনও বোঝা যায়নি সুর এতটা চড়াবেন তিনি। ভারতের সংবিধান রচনার ইতিহাস নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। সংবিধান সভায় নেহরু, পটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, মৌলানা আজাদ, অম্বেডকরের ভূমিকা নিয়েই প্রথমে আলোচনা করছিলেন সনিয়া। সেই সূত্র ধরেই সনিয়া বলেন, ভারতের সংবিধানের ইতিহাস স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এবং সেই কারণেই সংবিধানের ইতিহাস কংগ্রেসের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে যুক্ত। তার পরই সনিয়ার কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা সংবিধানের নীতিগুলির রূপায়ণ করেন, সেই মানুষগুলি ভাল হলে একটা খারাপ সংবিধানও ভাল সংবিধান হয়ে উঠতে পারে।’’ প্রকারান্তরে সনিয়ার কটাক্ষ ছিল, শাসকরা খারাপ হলে, ভাল সংবিধানও খারাপ হয়ে যায়। সে কথা বুঝতে কারও বাকি থাকেনি। এর পর কংগ্রেস সভানেত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সংবিধানে যে মূল নীতিগুলি রয়েছে, গত কয়েক মাসে দেশজুড়ে ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনা সেই নীতিগুলির সম্পূর্ণ বিরোধী।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বয়ান অবশ্য ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। সংবিধানে শুরু থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি ছিলই না, বলেন রাজনাথ। বি আর আম্বেদকরের প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আম্বেদকর সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রাখেননি। ইন্দিরা গাঁধীর আমলে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতন্ত্রী’ শব্দদু’টি প্রস্তবানায় যোগ করা হয়।’’ এই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটির অপব্যবহার দীর্ঘদিন ধরে ভারতে চলছে বলে রাজনাথ সিংহ এ দিন মন্তব্য করেন। বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে রাজনাথের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন।