নিহত প্রশান্ত শর্মাকে শেষ শ্রদ্ধা সেনার। ছবি: এএনআই
মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের সময় বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। কান ঘেঁষে চলে গিয়েছিল মৃত্যু। কাশ্মীর থেকে সে কথা প্রিয়বন্ধুকে ফোনে জানিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার সেই মৃত্যুকে এড়াতে পারলেন না রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ান, বছর তেইশের প্রশান্ত শর্মা। সেই খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ প্রশান্তের আত্মীয়-পরিজনরা। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে, সপ্তাহ তিনেক আগের সেই ঘটনার কথাই বার বার বলছেন প্রশান্তের বন্ধু পরীক্ষিৎ শর্মা।
উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বুধানা গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত। তাঁর বাবা শীষপাল সিংহ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী। ৬ ডিসেম্বর বিয়ে ঠিক হয়েছিল প্রশান্তের। কয়েক দিনের মধ্যেই ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথাও ছিল তাঁর। কিন্তু তার আগেই সব শেষ। শুক্রবার রাতে ভাই নিশান্তের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয় তাঁর। নিশান্ত বলছেন, ‘‘ও ফোনে বলেছিল, রুটিন তল্লাশিতে যাবে। ওর বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েও কথা হয়েছিল।’’
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় ওস্তাদ প্রশান্ত। সাইকেল চালাতে খুব পছন্দ করতেন। এ জন্য হৃষিকেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে একটি সাইকেলও কিনেছিলেন। কয়েকটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। শর্মা পরিবারের সদস্য এবং প্রশান্তের পাড়ার লোকজন বলছেন, দেশের হয়ে সাইক্লিংয়ে সোনা জেতার স্বপ্ন দেখতেন প্রশান্ত। কিন্তু সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল তাঁর।
আরও পড়ুন: বিজেপি থেকে পদত্যাগ তো করিনি, কিন্তু...’
প্রশান্তের বাবা শীষপালের কথায়, ‘‘২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে স্পোর্টস কোটায় যোগ দিয়েছিল প্রশান্ত। সেনার স্পোর্টস ডিভিশনে তার প্রশিক্ষণ হয়েছিল। পরে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে সিপাই হিসাবে যোগ দেন তিনি। বছর খানেক আগে প্রশান্তকে পুলওয়ামায় পাঠানো হয়েছিল।’’ জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার সকালে তল্লাশি অভিযানে বেরিয়েছিল পুলিশ, সেনা এবং আধাসামরিক বাহিনীর একটি যৌথ দল। সেনার তরফে বলা হয়েছে, জাদুরা গ্রামে তল্লাশি অভিযানের সময় আচমকাই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসে। তাতে গুরুতর জখম হন প্রশান্ত। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু বহু চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। সংঘর্ষে মত্যু হয়েছে ৩ হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিরও।
আরও পড়ুন: ছাত্ররা ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ চাইছেন, মোদী করলেন ‘খিলোনে পে চর্চা’, কটাক্ষ রাহুলের
শর্মা পরিবারের সাজানো স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। বুকে শোকের পাথর চেপেই প্রশান্তের বাবা বলছেন, ‘‘পুলওয়ামা ওর কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। আর ও চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসত।’’